২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ড ছিলো দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ – আরিফুল ইসলাম সোহেল
উজ্জ্বল অধিকারী: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ধ্বসের পথ উন্মুক্ত করা হয়েছিলো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিরাজগঞ্জ জেলা মজলিসে শুরা সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা জামায়াতের আমীর আরিফুল ইসলাম সোহেল।
তিনি আজ ২৮ অক্টোবর বিকেল ৪ টায় উপজেলার শেরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বেলকুচি উপজেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তান্ডব ও নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বেলকুচি উপজেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রশিদ শামীম এর পরিচালনায়, আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বেলকুচি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক নূর-উন-নবী সরকার, নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল হাসেম সরকার, সাবেক আমীর আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা অফিস সেক্রেটারি আবুল হোসেন ভূইয়া, পৌরসভা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম সারোয়ার, ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাওলানা ছানোয়ার হোসেন, ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাওলানা আহসান হাবীব, বেলকুচি উপজেলা শাখার শিবির সভাপতি হাফেজ ইউসুফ বাবু, সেক্রেটারি আরিয়ান ইসমাইল প্রমূখ।
আরিফুল ইসলাম সোহেল বলেন ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলো। সেদিন ছিলো ৪ দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ পূর্তির দিন। সংবিধান অনুযায়ি একটি নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠনের মাধ্যমে সে সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু অতি তুচ্ছ অজুহাতে আওয়ামীলীগ সাংবিধানিক সে সরকারকে মেনে নিতে রাজী হয়নি বরং কথিত আন্দোলনের নামে সারাদেশেই এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলো।
পরে বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংকট নিরসনে দফায় দফায় বৈঠক করে কোন সমাধানে উপনীত হতে পারেননি। এটা ছিলো সে সময়ের দেশের বৃহত্তম দু’দলের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। ফলে ২৮ অক্টোবর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তারপরও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয়। কিন্তু আওয়ামী নৈরাজ্য থেমে থাকে নি। এক সময় সরকারের উপদেষ্টারা পদত্যাগ করা শুরু করেন।
সে সুযোগেই ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনরা ১/১১-অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন,১/১১ কথিত জরুরি সরকারের কোন সাংবিধানিক ভিত্তি ছিলো না বরং সে সরকার অদ্ভুত প্রকৃতির বেআইনী সরকার। এ সরকারের কাজই ছিলো আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন। তিনি ২৮ আক্টোবরের কথা আবারো স্মরণ করে বলেন, মূলত, পল্টন হত্যাযজ্ঞ নিছক কোন হত্যাকাণ্ড ছিলো না বরং তা ছিলো দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সেদিন খুনীরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং লাশের ওপর নৃত্য করে দানবীয় উল্লাসে মেতে ওঠেছিলো।
আইয়্যামে জাহেলিয়াতে এ ধরনের নির্মমতা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের দ্বারাই তা সম্ভব হয়েছিলো। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও এসব খুনীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি ২৮ অক্টোবরের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ারার দরবারে দোয়া করেন। নায়েবে আমীর অধ্যাপক নূর-উন-নবী সরকার বলেন, ২৮ অক্টোবরের খুনীরা প্রকাশ্য রাজপথে মানুষ হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং লাশের ওপর দানবীয় মাতম চালিয়েছে।
শহীদরা জীবন দিয়েছেন কিন্তু বাতিলের কাছে মাথা নত করেননি। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর হয়েছিলো। ২০২৪ সালে আবু সাঈদ এবং মুদ্ধের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেয়েছে। তাই ২৮ অক্টোবরের চেতনায় পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের জন্য আসন্ন নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীদের বিজয়ী করার বিকল্প নেই। তিনি দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
মাওলানা আবুল হাসেম সরকার বলেন, পল্টন শহীদরা আমাদেরকে জীবন দিতে শিখিয়েছে। তাই আমাদের জন্য হতাশার কিছু নেই বরং শহীদি তামান্না নিয়েই আগামী দিনে নিজের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।