প্রকৃতির আগুনলাল ভালোবাসা: কৃষ্ণচূড়া ফুল


মনিরুল ইসলাম, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়তে থাকা প্রকৃতির মাঝে হঠাৎই এক আগুনলাল আবির্ভাব—কৃষ্ণচূড়া। রাস্তার ধারে, স্কুল প্রাঙ্গণে কিংবা শহরের ব্যস্ত সড়কে, এ যেন এক লাল আগুনের উৎসব। এই ফুল শুধু গ্রীষ্মের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং মনকেও রাঙিয়ে তোলে এক অন্যরকম অনুভবের রঙে।কৃষ্ণচূড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia, যা ফ্যাবাসি (Fabaceae) গোত্রের অন্তর্গত। এটি মূলত মাদাগাস্কার থেকে আগত হলেও এখন বিশ্বের বহু দেশে এর বিস্তার ঘটেছে, বিশেষ করে উপক্রান্তীয় ও উষ্ণ অঞ্চলে (তথ্যসূত্র: Banglapedia – National Encyclopedia of Bangladesh)। বাংলাদেশে এই গাছটি সাধারণত মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ফুলে ফুলে ঢেকে থাকে, যা শহরের দৃশ্যপট বদলে দেয় চোখধাঁধানো এক রঙে।
এই ফুলের বিশেষত্ব এর উজ্জ্বল লাল-কমলা রঙ, যা দূর থেকেই নজর কাড়ে। পাঁচটি পাপড়ির মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে বড় ও প্রায়শই সাদা দাগবিশিষ্ট, যা ফুলটির সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে (তথ্যসূত্র: Flora of Bangladesh, Bangladesh National Herbarium)। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে যখন প্রকৃতি ক্লান্ত, তখন এই আগুনরাঙা ফুল যেন জীবনের এক নবজাগরণ। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা হয়ে আসে। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন নাগরপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ, সরকারি কলেজ চত্বর, পাথাইলকান্দি, ধুবড়িয়া, সল্লা ও সহবতপুর ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের পাশে কৃষ্ণচূড়ার গাছ রীতিমতো প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে।
প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হলে কৃষ্ণচূড়ার রঙে মনটা ভালো হয়ে যায়। এটা আমাদের গ্রামের প্রকৃতির সঙ্গে এক নিবিড় বন্ধন তৈরি করে। রবিউল ইসলাম, নাগরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র স্থানীয় পরিবেশ সচেতন সংগঠন ‘সবুজ নাগরপুর’ প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে কৃষ্ণচূড়াসহ দেশীয় ফুলগাছ রোপণের কর্মসূচি নেয়, যাতে নাগরপুর আরও সবুজ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। এই উদ্যোগ নাগরিকদের মাঝে প্রকৃতিপ্রেম জাগিয়ে তোলে।
শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণেই নয়, সাধারণ মানুষের মনেও এই ফুলের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও সাংবাদিক মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন—কৃষ্ণচূড়া শুধু একটি ফুল নয়, এটা গ্রীষ্মের প্রতীক। এর রঙ প্রকৃতির আগুন আর মানুষের আবেগ একসাথে প্রকাশ করে। এই ফুল কেবল চোখের আরামই নয়, হৃদয়েরও প্রশান্তি। প্রেম, নস্টালজিয়া, বিরহ কিংবা স্মৃতির ছোঁয়া—সবকিছুর সঙ্গে এক অপূর্ব সেতুবন্ধন গড়ে তোলে কৃষ্ণচূড়া। অনেক কবি ও সাহিত্যিক এই ফুলকে তাঁদের কবিতা ও গল্পে রূপকেরূপে ব্যবহার করেছেন। শহরের কংক্রিটের জঞ্জালে যখন সবুজের অভাব ঘটে, তখন কৃষ্ণচূড়ার রঙ যেন বলে উঠে—প্রকৃতি এখনো হারায়নি, সে জেগে আছে আমাদের মাঝেই।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।