নূরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় শ্যালিকার করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন
সংবাদের আলো ডেস্ক: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নূরাল পাগলের দরবারে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মামলার বাদী ও নূরাল পাগলের শ্যালিকা শিরিন বেগম।
গতকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ আমলি আদালতে এ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২২ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার বাদী শিরিন বেগম ও মামলার আসামিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে তিনি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
এর আগে ১৩ নভেম্বর নূরাল পাগলের দরবারে হামলার প্রায় ২ মাস পর নূরাল পাগলের শ্যালিকা শিরিন বেগম ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। তার প্রেক্ষিতে আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামজিদ হোসেন অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
এই মামলার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এসময় অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছাড়েন। যার ফলে ১৭ নভেম্বর উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ইমাম মেহেদি দাবি করা গোয়ালন্দের বিতর্কিত পীর নূরাল পাগলের মৃত্যুর পর দরবারের ভেতর কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা ১২ ফুট উঁচু বেদিতে কবর দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় উত্তেজনা। এরপর থেকে কবর নিচু করা, কাবার আদলে করা রং ও ‘ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি করে আসছিল জেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটিসহ আলেম সমাজ। যার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইমান আকিদা রক্ষা কমিটিসহ আলেম সমাজ দরবারের ভক্তদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনায় বসেন এবং দাবির প্রেক্ষিতে ভক্তরা কাবার আদলে করা রং ও ‘ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করলেও কবর নিচু না করায় বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
এক পর্যায়ে ২ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দ উপজেলা মডেল মসজিদ এবং ৩ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কবর নিচু করতে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি। এসময় জেলা ও উপজেলা ইমাম কমিটির নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নূরাল পাগলের দরবারের ভক্তদের ব্যানারে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কবর নিচু করার কথা জানান ভক্ত মেহেদি আল আমিন। এর আগে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির দরবার পরিদর্শন করে কবর নিচু করার বিষয়টি দেখেন।
এক পর্যায়ে জুম্মার নামাজের পর পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনুযায়ী গোয়ালন্দ শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভে জড়ো হয় তৌহিদী জনতা। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য শেষে কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করে। সেইসঙ্গে ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২ জনকে পিটিয়ে ও ঢিল ছুড়ে আহত করে।
এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা নূরাল পাগলের বাড়ি ও দরবারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভবন ও দরবার শরিফ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে শরিয়ত পরিপন্থি দাফনের অভিযোগ এনে তৌহিদী জনতা নূরাল পাগলের কফিনবন্দি মরদেহ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওই রাতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান নূরাল পাগলের ভক্ত রাসেল মোল্লা।
পরে রাতেই পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. সেলিম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
অন্যদিকে ৮ সেপ্টেম্বর নূরাল পাগলের বাড়ি ও দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ, চুরি, জখম, হত্যা ও কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পোড়ানোর অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন দরবারের ভক্ত নিহত রাসেলের বাবা আজাদ মোল্লা। এই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।