গঙ্গাচড়ায় আতঙ্ক কাটেনি, জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন হিন্দুপল্লীর বাসিন্দারা


সংবাদের আলো ডেস্ক: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক কিশোর (১৭) গ্রেপ্তার হলেও উত্তেজিত জনতা ওই কিশোরের বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্তত ১৮টি বসতঘরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ঘটনায় গঙ্গাচড়ার বালাপাড়া গ্রামের হিন্দুপল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ভয়ে বাড়িরর জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সোমবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। তবু হিন্দুপল্লীর লোকজনের ভয় কাটছে না। তারা বাড়ির জিনিসপত্র ভ্যানে নিয়ে দূরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, ‘দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার শাস্তি হোক। কিন্তু মাইকিং করে হিন্দুপল্লীতে হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পেয়ে শনিবার রাতে ওই কিশোরকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরদিন সাইবার সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। রোববার দুপুরে আদালত তাকে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠান। ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা শনিবার রাতে ওই কিশোরের বিচারের দাবিতে মিছিল করে। পরে তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। একই সময় আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। পরে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে রোববার নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার এবং খিলালগঞ্জ এলাকায় মানববন্ধন হয়। মাইকিং করে সেখানে লোকজন জড়ো করে বিকেলে ওই হিন্দুপল্লীর অন্তত ১৮টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এদিন গ্রামের প্রমোদ মোহন্ত, সুজন রায়, কিশোব রায়, জয়চাঁদ রায়, অমিত মোহন্ত, রবিন্দ্রনাথ রায়, ধরনী মোহন্ত, অতুল রায়, সুমন রায়, ধনঞ্জয় রায়, কমলাকান্ত রায়, সুবল রায়, অবিনাশ রায়, লালমোহন রায়, হরিদাস রায়, মনোরঞ্জন শীল, লিটন মোহন্ত ও উপিন চন্দ্র মোহন্তর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
এসব পরিবারের সদস্যদের দাবি, হামলাকারীরা অধিকাংশ কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার এলাকার। তারা শুধু বাড়িঘর ভাঙচুর করেনি; স্বর্ণ, নগদ টাকা, চালের বস্তা, গরু, কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্র লুটপাট করেছে।
সোমবার দুপুরে ভ্যানে জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন অধীর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘ঘরে চাল নেই, চুলো নেই; থাকার মতো পরিস্থিতি নেই। পকেটে টাকাও নেই। লোকজন হামলা করে কয়েকটি গরু নিয়ে গেছে। এখন সম্বল বলতে দুটি গরু আছে। এগুলো রক্ষা করতে হবে। তাই গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’ পলাশ চন্দ্র রায়ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছি। এখানে থাকলে আবার কখন হামলা হয়, জানি না! এখন আর নিরাপদ বোধ করছি না এখানে।’
স্থানীয় সুবাস রায় বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই রোববার আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, তারা কিচ্ছু করতে পারেনি। ফের যদি হামলা হয়! সে কারণে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন অনেকে।’ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ সময় তারা গরু, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণ, নগদ টাকা, কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্র লুট করেছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫টি পরিবার গ্রাম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইলফোনে হুমকি পাচ্ছে গ্রামবাসী। ফলে ভয়ে অনেকে গ্রাম ছাড়ছে। ভয়ে অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, ‘কিছু পরিবার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছে। অনেকে হামলার ভয় করছেন। তবে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। ওই গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই কিশোরের পরিবার ও স্বজন ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। এ ছাড়া কিছু পরিবার হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে বলে জেনেছি। তবে আমরা গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছি, বাড়ি ছাড়ার প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি এখন শান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সূত্র: সমকাল
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।