শিকলে বাঁধা শিশু নাহিদের জীবন ঘুষের টাকার জন্য মেলেনি ভাতা কার্ড


রায়হান আলী, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সড়াতৈল গ্রামে ৫ বছর হলো মানুষিক ভারসাম্যহীন নাহিদ হোসেন (১০) নামে এক শিশু কে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার বাবা-মা। জানা যায় ২০১৬ সালে দিনমজুর রুহুল আমীন ও সীমা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করে শিশু নাহিদ। সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করলেও ৫ বছর বয়সে মানুষিক সমস্যা দেখা যায় । অনেক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়নি, পরে ডাক্তারের কাছে জানতে পারে তাদের সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। স্কুলের বারান্দায় যাওয়ার আগেই বিভিন্ন ডাক্তার কাছে চিকিৎসা নিতে সময় কেটে গেছে শিশুটির । সন্তান চিকিৎসায় দিনমজুর রুহুল আমীনের টাকাপয়সা শেষ হলেও সুস্থ হয়নি তার সন্তান। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু নাহিদ হোসেনের যাবতীয় কাজ তার মা সীমা খাতুন করে থাকেন। ছেলের খাওয়ানো থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবকিছু তাকে করতে হয় । তিনি চোখ বুজলে ছেলের কী হবে, তা ভেবে চোখের পানি ফেলেন তার মা। ইচ্ছে ছিলো তাদের সন্তান অন্যান্য শিশুদের মতোই স্কুলে যাবে, লেখাপড়া করবে, কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। শিশু নাহিদের চিকিৎসা করতে নিঃস্ব হয়েছে পরিবারটি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শিশু নাহিদের বাম পায়ে লোহার শিকলে বাঁধা রয়েছে, পাশেই কাঠের ব্রেঞ্চের সাথে তালাবদ্ধ করা শিকল। শিশুটি শিকল থেকে মুক্তি পেতে ছটফট করছে, পাশেই অন্যান্য শিশুরা খেলছে, কিন্তু তাকে শিকলে বাঁধা থেকে মুক্তি দিচ্ছে না তার বাবা-মা। পরিবারটির দাবি ছেলে দুষ্টুমি করায় তাকে শিকলে বাঁধা হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শিকলে বাঁধা রয়েছে বলেন জানান নাহিদের বাবা রুহুল আমীন। তিনি বলেন তার ছেলে সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তী ডাক্তারের মাধ্যমে জানতে পারেন তার সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। দুষ্টমি করায় তার ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। সন্তানের চিকিৎসার জন্য তিনি অনেক টাকা খরচ করেছেন। ডাক্তার তার শিশু সন্তান কে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিহ্নিত করার পর তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভাতা কার্ডের জন্য আবেদন করেন।
শিশু নাহিদের বাবা অভিযোগ করেন ভাতা কার্ডের জন্য ২ বছর হলো উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তিনি ঘুরছেন, ঘুষ না দেওয়ায় ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড পাচ্ছেন না। সড়াতৈল গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান শিশু নাহিদ এর বাবা অনেক টাকাপয়সা খরচ করেছে তার চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সুস্থ হয়নি। শিশু নাহিদ এর ভাতা কার্ডের জন্য তার বাবা অনেকদিন হলো ঘুরছে, সমাজসেবা অফিসের এক কর্মচারি কে ঘুষ না দেওয়ায় ভাতা কার্ড দেওয়া হয়নি তাকে। তবে বিষয়টি নিয়ে উল্লাপাড়া সমাজসেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান তিনি ঘটনাটি জানেন না। কেউ যদি ঘুষ চেয়ে থাকেন তিনি ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়াও তিনি আরো জানান শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। শিশু নাহিদ কে দ্রুত সম্ভব প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।