ফ্ল্যাট মালিকের গাড়ি চাপায় নিহত সিকিউরিটি গার্ডের বাড়িতে আহাজারি,এলাকাবাসীর দাবি পরিকল্পিত হত্যা


নেত্রকোনা প্রতিনিধি: রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন নেত্রকোনার ছেলে ফজলুল রহমান (২৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার(০৪ জুলাই) সকালে ফ্ল্যাট মালিকের গাড়িচাপায় নিহত হয়েছেন তিনি।
গ্রামের নিহত নিহত নিরাপত্তাকর্মী ফজলুল হকের বাড়িতে চলছে কান্নার আহাজারি। গ্রামের মানুষেরাও এসে দিচ্ছেন শান্তনা। এমন হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত বলে বিচারের দাবী স্বজনদের ও এলাকাবাসীর। নিহত ফজলুল রহমান নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বামুনিকোনা গ্রামের আসর আলীর ছেলে।

আজ শুক্রবার (০৫ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটায় নিজের বাড়িতে জানাজার পর পারিবারিক কবরাস্থানে তাঁকে দাপন করা হয়। তিনি গত ১ জুলাই থেকে একটি সিকিউরিটিগার্ড কম্পানির অধীনে ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার আগে বাসার প্রধান ফটকের পাশে বসে ছিলেন দুই নিরাপত্তাকর্মী। এ সময় ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক মফিদুল ইসলাম তাঁর প্রাইভেট কার চালাতে গেলে সেটির চাপায় ওই নিরাপত্তাকর্মী আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ফজলুল হকের দুই মেয়ে বড় মেয়ে সুমাইয়া বেগম(৫) ও ছোট মেয়ে লামিয়া( ১৬ মাস)।

দুই মেয়ের চোখে হতাশা চাপ।স্ত্রী শরীফা আক্তার গর্ভে রয়েছে আরও একটি সন্তান। এমন অবস্থায় পরিবারের মাঝে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। মা রেজিয়া বেগম জানান, আমার চোখের ছানি অপারেশন করায় ভালো ভাবে দেখতে পারিনি আমার ছেলেকে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমাদের হত দরিদ্র এই পরিবারের মধ্যে সকল ছেলেদের মাঝে আমার ভরসার প্রতীক ছিল ফজলু। আমার দাবী ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়া হোক। চাচাতো ভাই নুরুজ্জামান লিটন জানান, দরিদ্র এই পরিবারটির মাঝে নিহত ফজলুল সবার ছোট। বড় তিন ভাই তিন বোন সকলেই বিভিন্ন শ্রমিক এবং কৃষির কাজ করে চলে।

একজন আরেকজনের পরিবার দেখভালের সুযোগ নেই। এই অবস্থায় ফজলুলের স্ত্রী সন্তানের জীবনের কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না। মায়ের আরও সন্তান থাকলেও এই ছেলের উপরেই ছিলো নির্ভরশীল। বড় বোন মীনারা বেগম জানায়, এখনো কেন গাড়ি সহ মালিককে আটক করা হয় আমি এবং আমার পরিবার এর জবাব চান। আর আমার ভাইয়ের বউ তো কিছু বুঝে না, এটা সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হবে কেন? এটাতো পরিকল্পিত হত্যা এটা তো হত্যা মামলা হবে। আমি চাই এটা পুনরায় হত্যা মামলার অধীনে আনা হোক। নিহত ফজলুল হকের স্ত্রী লামিয়া জানায়, সকাল ৭ টায় আমার সাথে ফোনে কথা হয়। আমি ২ দিন আগে বাড়িতে আসায়, আমাকে বললো কালকে বাসায় চলে যেতে। পরে হঠাৎ একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে এবং জানায় যে আমার স্বামী মারা গেছেন।

আমি শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি।এলাকাবাসী মো. আবুল হাসেম এটি হত্যা দাবী করে সময়ের কণ্ঠস্বর কে জানান, গাড়িটিতে সমস্যা আছে ড্রাইভার জানানোর পরও মালিক কেন গাড়িটি নিয়ে বের হবেন? আর পরিপক্ষ ভাবে গাড়ি না চালাতে পারলে তিনি কেন গাড়ি চালাবেন। নিষেধ না মেনে যেহেতু গাড়ি নিয়ে চালানোর বের হয়েছে, এটা তো পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। কিন্তু হত্যার একদিন চলে যাওয়ার পরও সিকিউরিটি কম্পানি কেন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমি এলাকাবাসী সের সুষ্ঠু তদন্ত বিচার দাবি করি। উল্লেখ্য গত ৬-৭ বছর ধরেই তিনি ঢাকায় কাজ করেন। পূর্বে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির পাইলিং এর কাজ করতেন। গত ১ জুলাই সিকিউরিটি কোম্পানিতে যোগদান করেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।