বৃহস্পতিবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ দুই সুপারিশের একটিতে একমত এনসিপি: নাহিদ

সংবাদের আলো ডেস্ক: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ দুই সুপারিশের প্রথম প্রস্তাবনায় এনসিপি একমত। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগের সাড়া  পেলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে দলটি বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার বিষয়ে অবশ্যই আমাদের ভাবতে হবে। শাপলা প্রতীক যদি এনসিপিকে না দেয়া হয়, তাহলে তাদের দ্বারা সুষ্ঠু  নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা প্রশ্ন থেকে যায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার ( ২৯ অক্টোবর) দিনভর রংপুর পর্যটন মোটেলে বিভাগের মহানগর, জেলা, উপজেলা, ও পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ভাইভা কার্যক্রম পরিচালনা শেষে সন্ধায় প্রেস ব্রিফিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই সনদে সাক্ষর করা প্রসঙ্গে  নাহিদ বলেন, সংস্কার বিষয় বা জুলাই সনদ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন সর্বশেষ যে সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হলো, আমরা মনে করছি যে এতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের একটা দাবি ছিল যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হলে সেটা কীভাবে হবে। সেখানে ঐকমত্য কমিশন দুইটি প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা মনে করি দুটি প্রস্তাবের প্রয়োজন ছিল না। কারণ দ্বিতীয় যে প্রস্তাবটি সেই প্রস্তাবটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম প্রস্তাবটি তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য। ফলে প্রথম প্রস্তাবটিকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি। সেটা কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে। এখন প্রয়োজন আদেশটাকে প্রকাশ করা।  সুপারিশে বলা আছে যে, আদেশ জারি করবে অন্তবর্তি সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস তিনি এই আদেশটি জারি করবেন।

নাহিদ আরও বলেন, আমাদের যে দাবিগুলা ছিল সেই প্রেক্ষিতে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিলাম। এছাড়া আমরা গণভোটের কথা বলেছি। আমাদের পরবর্তী সংসদের হাতে সেই ক্ষমতা থাকবে। যার ভিত্তিতে তারা সংস্কারে করে সংবিধান দুহাজার ছাব্বিশ তৈরি করবে। ফলে প্রথম প্রস্তাবটিকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি এবং প্রথম প্রস্তাবটি যাতে সরকার দ্রুত আদেশ জারি করার ব্যবস্থা করে। এ ব্যপারে আদেশ জারির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া আসলে আমরা তখন স্বাক্ষরের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। তাই প্রথম প্রস্তাবটাকে আমরা সমর্থন করছি. এবং সরকার যখনই জানাবে যে তারা প্রথম প্রস্তাবটি অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করবে। তখনই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবো।

ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে প্রসঙ্গে  নাহিদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন দল এখন নানা ধরনের কথা বলছে। তবে আমরা বলবো, এ বিষয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের যে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেগুলোই আলোচনায় এসেছে। নোট অব ডিসেন্টেন্স যে বিষয়গুলো এসেছে। এখনো অনেকে মনে হয় কথা বলতে যেন ভুলে গেছি। সেগুলো ছিল যে, কমিশন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু একটা দলের সেখানে বিরোধিতা ছিল। সেটাকে ডকুমেন্ট আকারে রাখতে চেয়েছে তারা। কোনো নোট অব ডিসেন্ট মানেই এটা বুঝায় । যাতে আমরা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।  হয়তো কারো কারো সেখানে বিরোধিতা ছিল। সেটা উল্লেখ করা থাকবে। সেই ধারণাটা গৃহীত হয়ে গেছে।

ফেব্রুয়ারির নিবার্চন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, জুলাই সংস্কার, জুলাই সনদ এবং জুলাইয়ের গণহত্যার বিচারের রোড ম্যাপ অবশ্যই সরকারকে নির্বাচনের আগে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ নির্বাচন কমিশন জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের আস্থা হারাচ্ছে। তাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হলে এই বিষয়গুলো দ্রুতই সমাধানের দিকে যেতে হবে।

দেশে বহুমাত্রিক সংকট আছে, তবুও রাজনৈতিক ঐক্যমতের মাধমেই এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, জনগনের অনেক প্রত্যাশা ছিল গণঅভ্যূত্থানের পর। এই সরকারের পক্ষ থেকে, এমনকি আমাদের পক্ষ থেকেও। ফলে আমরা  মনে করছি প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে দেশে। মানুষের একটা ভয় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সব কিছু কি আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কিনা? যাবে কিনা? নতুন করে কোন ফ্যাসিবাদ আসবে কিনা? স্বৈরতন্ত্র আসবে কিনা? মানুষের সেই কথা বলার জায়গাটা থাকবে কিনা?

নাহিদ বলেন, ৫ আগস্টের পর দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের যে রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়েছে, চাঁদাবাজ দখলদারিত্ত্ব, অন্যদিকে আমরা আবার সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখছি। দেশে নানামুখি সংকট আছে। পতিত স্বৈারচারী শক্তি তারা তো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যার সাথে অনৈক বৈদেশিক শক্তিও জড়িত। ফলে আমরা সংকটের মুখেই আাছি। এই সংকটের মধ্যে যেমন আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আবার এই জাতীয় ঐক্যের ভেতরে নিজেদের দলগুলোর ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে। সেগুলো সমাধান করেই আমাদের এক জায়গায় থাকতে হবে।

শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, শাপলা কমিশন কেন এনসিপিকে দিবে না, সেটার আইনি ব্যাখ্যা দিতে হবে কমিশনকে। আমরা এখনও মনে করছি তারা আমাদের শাপল দেবেন। শাপলা যদি এনসিপিক না দেয়া হয়, তাহলে তাদের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা এটা প্রশ্ন থেকে যায়। একটা নবগঠিত দলের সাথে যদি তারা বেইনসাফি করে  তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে আগের নির্বাচন কমিশনের যে পরিণতি হয়েছে। সেই পরিনতিই ভোগ করতে হবে তাদের।

বিএনপি ও জামায়াতের সাথে জোট করতে গেলে ভাবতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছে। কারও মুখাপেক্ষি বা কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করবো না। কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কারও সাথে সমঝোতার প্রয়োজন হয় সেটার জন্য আমার দল ওপেন আছে।

এসময় সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলীয় মুখপাত্র সারজিস আলম, বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. আতিক মুজাহিদ,  যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সাঈদ লিওন, সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল্লাহ আল গালিব, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল মোনায়েমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ  উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়