অধ্যাপক ছাড়াই চলছে কুবির ১৯ বিভাগের মধ্যে ৭টি বিভাগ
কুবি প্রতিনিধি: প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৭টি বিভাগ চলছে অধ্যাপক ছাড়াই। ১৯ বিভাগে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও বিভাগগুলোর পুরো একাডেমিক কাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে আছে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের উপর।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কুবিতে মোট শিক্ষক রয়েছেন ২৮১ জন। এই ২৮১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯৬ জনই রয়েছেন আবার শিক্ষা ছুটিতে। ১৯টি বিভাগের মধ্যে ৭টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে অধ্যাপক ছাড়া।
বিভাগগুলো হলো বিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসি বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নৃবিজ্ঞান বিভাগ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং আইন অনুষদের আইন বিভাগ। ছয়টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে ১৮১ জন শিক্ষক বর্তমানে রয়েছেন, এর মধ্যে অধ্যাপক ৫২ জন। বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগে ৭ জন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ৩ জন, রসায়ন বিভাগে ৬ জন।
কলা ও মানবিক অনুষদের ইংরেজি বিভাগে ৩ জন, বাংলা বিভাগে ৫ জন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগে ৬ জন, লোক প্রশাসন বিভাগে ৬ জন। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে ৩ জন, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগে ৬ জন, মার্কেটিং বিভাগে ৪ জন। প্রকৌশল অনুষদের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগে ২ জন অধ্যাপক আছেন। উক্ত বিষয়ে বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যাপক না থাকাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
আমাদের বিভাগের আগের ব্যাচগুলো কোনো অধ্যাপকের ক্লাস ছাড়াই পড়াশোনা শেষ করেছেন। অধ্যাপকদের একাডেমিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গুণমান শিক্ষার সুযোগও পাননি। এটি সত্যিই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অধ্যাপক নিয়োগের দাবিতে তারা কয়েকবার উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলেন। উপাচার্য তাদের অধ্যাপক নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কোনো কারণে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, বিভাগের বর্তমান কিছু শিক্ষকের বিরোধিতার কারণেই এখনো পর্যন্ত অধ্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেমে আছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, “যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা কম থাকলে তা বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শিক্ষকদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা, শিক্ষার্থীদের জীবনগঠন, দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, আচার-আচরণ সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে বিভাগের সার্বিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদগুলো অনুমোদন করাতে পারে, তাহলে এই ধরনের সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।” কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ” আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই অধ্যাপক ছাড়া যাত্রা শুরু করেছে। অধ্যাপক না থাকলে সমস্যা হয় না, তা নয়- সমস্যা হয়, তবুও আমরা এতদূর পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি অধ্যাপক ছাড়াই। আমরা নিয়মিত চেষ্টা করছি। আইনগত বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখতে ও বিভাগে একটি সুস্থ সংস্কৃতি তৈরি করতে অধ্যাপক থাকা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “বাজেট সীমিত থাকায় আমরা কিছু বাস্তব বিবেচনা করছি। অধ্যাপক নিয়োগ দিলে তাদের বেতন তুলনামূলক বেশি হয়, অন্যদিকে প্রভাষকের বেতন তুলনামূলকভাবে কম।
অধ্যাপকের পরিবর্তে দুইজন প্রভাষক নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে জনবলও বাড়ে এবং প্রভাষকরা যেহেতু নতুন, তাদের রিসেন্ট নলেজ বা হালনাগাদ জ্ঞানও বেশি থাকে। এছাড়া অধ্যাপকদের একটি কোর্স নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, প্রভাষকদের ন্যূনতম চারটি কোর্স নিতে হয়, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। এই বিবেচনাতেই আমরা কাজ করছি, যেমনটা আগের প্রশাসনগুলোও করেছে।” এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।