তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ


সিয়ামুল ইসলাম ইমন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার(২১ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর ডিভিশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘চির উন্নত মম শির’ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গের প্রাণ ফিরাও; দিল্লী না ঢাকা,ঢাকা ঢাকা; ভারত যদি বন্ধু হও, ন্যায্য পানির হিস্যা দাও; তিস্তা বাঁচাও দেশ বাঁচাও, তিস্তা বাঁচাও কৃষক বাঁচাও; তিস্তা পারের কান্না, আর না আর না; তিস্তা নিয়ে টাল বাহানা, চলবে না, চলবে না; সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চির উন্নত মম শির’ স্মৃতিস্তম্ভে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন রোমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও রংপুর ডিভিশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান,সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার রাব্বি,বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জিহাদুজ্জামান জিসান এবং রংপুর ডিভিশনাল স্টূডেন্ট এসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি সাহাবির হোসেন সাব্বির সহ অন্যরা।
এসময় তারা, নদী খনন ও প্রবাহ পুনরুদ্ধার, তিস্তার মূলধারা গভীর ও প্রশস্ত করতে হবে নদীতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার জন্য রিজার্ভয়ার বা ব্যারেজ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও সেচনির্ভর কৃষি টিকিয়ে রাখতে তিস্তার পানি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানো, বন্যা ও ভাঙন নিয়ন্ত্রণের জন্য তিস্তা নদীর তীরে শক্তিশালী ও স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ, কৃষি, মৎস্য ও জীবিকা উন্নয়নে নদীভিত্তিক কৃষি, চিংড়ি চাষ, মাছ চাষ ও পর্যটন উন্নয়নকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার অংশ করা এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্য পানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য নদীর আশেপাশের চরাঞ্চলে বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পানি দূষণ, বালু দখল, এবং অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ বন্ধ করা সহ বিভিন্ন দাবি জানান।
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং রংপুর ডিভিশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান বলেন, `তিস্তা সমস্যা এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে, এটি এখন আর উত্তরবঙ্গের মানুষের সমস্যা না, এটি পুরো বাংলাদেশের সমস্যা। তিস্তা পাড়ের মানুষেরা এক সময় স্বনির্ভর ছিল, তিস্তাকে কেন্দ্র করেই মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতো।
কিন্তু তিস্তা এখন বালুর চরে পরিণত হয়েছে, তিস্তা এখন মানুষের দুঃখে পরিণত হয়েছে। তিস্তা ছিল আমাদের মায়ের মতো, কিন্তু তিস্তা এখন অবহেলায় পড়ে আছে। আমরা আর এটি হতে দিতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার বলেছে নভেম্বরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কিন্তু এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে কারণ এখনো কোন পিডি নিয়োগ, মাস্টারপ্লান বা কোন পরিকল্পনা দৃশ্যমান হয় নি।
একসময় যার গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল আজ তারা নিঃস্ব হয়ে আছে। ফ্যাসিবাদের সময়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ অবহেলিত ছিল, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে কিন্তু তা হয় নি। এই ভারতীয় আগ্রাসনের ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না কিন্তু বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় কোন রকম বৃষ্টি ছাড়াই লোকালয়ে পানি ঢুকে যায়। আগামী (৩০ অক্টোবর) রংপুরে স্তব্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারকে বলবো যদি নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হয় আমরা শিক্ষার্থীরা সব গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শাট ডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সানোয়ার রাব্বি প্রমিজ বলেন, ‘তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রাণ। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীর মানুষ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত খরার সময় পানি আটকে রেখে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট করছে, ফলে কৃষক ও জেলেরা বিপর্যস্ত, অনেকে ভিটেমাটি হারিয়েছে।
সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও কাজ শুরু হয়নি। আমরা চাই, নভেম্বরের মধ্যেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হোক।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জিহাদুজ্জামান জিসান বলেন, ‘ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তিস্তার পানি নিয়ে বারবার রাজনীতি হয়েছে। পানি যখন প্রয়োজন ঠিক সে সময় বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষ সেটা পাই নি। যখন প্রয়োজন ছিল না, ভারতে বন্যা হয়েছে বা কারণ ঘটেছে ঠিক সে সময়ে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের সাথে বারংবার প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতিটি সরকারের আমলেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা শুনলেই এটা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ আমরা দেখিনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এটার সমাধান পাবো কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী যে চুক্তিগুলো ভারতের সাথে রয়েছে সেগুলোর এখন পর্যন্ত ভালোভাবে বাস্তবায়ন আমরা দেখি নি। বাংলাদেশের মানুষ এটি উপলব্ধি করেছে যে আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষ একত্র হয়েছি, আমাদের মাধ্যমে এই ভয়েসগুলো পৌঁছাবে আর প্রতারণার সুযোগ নেই।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।