রেড ক্রিসেন্টে চলছে সুলতান – শাহানার দুর্নীতির এককেন্দ্রীক আধিপাত্য, বইছে আওয়ামী দুসরদের দুর্নীতির ধমকা হাওয়া


নিজেস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শিকল থেকে এই দেশ স্বাধীন হলেও রেড ক্রিসেন্টের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেন স্বাধীনতার কোন ছোয়া লাগে নি। বিগত ০৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হলেও মানবিক এই প্রতিষ্ঠানটি দুসরদের কালো থাবা থেকে যেন কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছে না। দেশ হতে স্বৈরাচারী সরকার পতন হলেও এই সরকারে দুসররা প্রতিটি ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সহিত অবস্থান নিয়ে পুনরায় এই মানবিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রপাকান্ড চালাচ্ছে। হতদরিদ্র, অসহায়দের মানবিক সহায়তাদানে নিয়োজিত দেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি দিনদিন ঘৃণ্য দুর্নীতিবাজ, অমানবিক মানসিকতা সম্পন্ন অর্থলিপ্সুদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ গরীব-দুঃখীদের সাহায্যের টাকা মেরে সম্পদের পাহাড় গড়ায় মত্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময় দেশের গণমাধ্যমে এসব দুর্নীতির কাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুর্দাণ্ড প্রতাপের সাথে বহুমাত্রিক দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ এবং পরিচালক ডাঃ শাহানা জাফর। উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদঃ দুর্দণ্ড প্রতাপের সাথে দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়া অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মাস্টারমাইন্ড সোসাইটির উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ। অবৈধ নিয়োগকৃত এই কর্মকর্তা সোসাইটিতে যোগদানদের পরপরই চলে তার নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষেশ সেন্ডিকেট। উক্ত সেন্ডিকেট সোসাইটির নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে নানা প্রকার অপকর্ম পরিচালনা করে।
সোসাইটিতে নতুন নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপ, বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ, পদায়ণ , টেন্ডারবাজী বাস্তবায়ন একমাত্র এই সেন্ডিকেটের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়। উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালে সোসাইটিতে স্বৈরচারী দুসরদের ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে রেড ক্রিসেন্টের মতো মানবিক প্রতিষ্ঠানে উপ-মহাসচিব পদে সুলতান আহমেদ যোগদান করেন। রেড ক্রিসেন্টের টাকায় একাধিকবার করেন বিদেশ ভ্রমণ । নিজ অফিস কক্ষে নারী কর্মকর্তাদের নিয়ে সিডিউল অনুযায়ী একান্ত সময় কাটানোরও অভিযোগ রয়েছে। পরিচালক- ডাঃ শাহানা জাফরঃ দুর্নীতি-অনিয়ম সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলেন সোসাইটির তহবিল বিভাগের পরিচালক- ডাঃ শাহানা জাফর। আওয়ামী শাসনামলে একাধিপত্য কায়েম করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি।
এই অবৈধ উপায়ে বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চাকরি জীবনে কাজ নেই যা ডা. শাহানা জাফর করেননি। টাকার জন্য তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গনকে ‘গরুর হাটে’ পরিণতও করেছেন। গরুপ্রতি টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন শহীদ ময়েজ উদ্দীন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রাঙ্গণকেও। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের অবসান হলেও প্রশাসনের সকল স্তরে ঘাপটি মেরে আছে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দোসর। ডা. শাহানা জাফর একনিষ্ঠ আওয়ামীপ্রেমী ফ্যাসিস্টদের দোসর হলেও এখন তিনি আওয়ামী পরিচয় লুকিয়ে বৈষম্য বিরোধী ‘আলখেল্লা’র আড়ালে আওয়ামী আদর্শেই হাঁটছেন। ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এক সম্মেলনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ও আইএফআরসি’র গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেড ক্রিসেন্টের অনেকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যহার ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ড সদস্যরা অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ এখনও আওয়ামী দোসর ডা. শাহানা জাফর বহাল তবিয়তে টিকে আছেন, গোপনে তাদের ও দলের মিশন পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে তার ভূমিকা বিতর্কিত প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ডা. শাহানা জাফর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে এখনও সকল ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন- এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সোসাইটির প্রধান কার্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ডা. শাহানার মতো কর্মকর্তার অপকর্মের ফলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মতো বৃহৎ এই মানবিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম আগেও ক্ষুন্ন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ডা. শাহানা জাফরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম, অনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার অভিযোগ উঠলেও তিনি বিশেষ কৌশলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে সবসময় রেহাই পেয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকার পরও কেন অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন করে বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডা. শাহানা জাফর সোসাইটির সাবেক উপ-মহাসচিব জাকারিয়া খালেদের সাথে বিশেষ সম্পর্কে থাকার কারণেই বিগত সময়ে নানান অপকর্ম করেও পাড় পেয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক ম্যানেজিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নুর-উর রহমানের সাথে বিশেষ সখ্য থাকার কারণে সোসাইটিতে বিভিন্ন প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ড করে অর্থ আত্মসাৎ এবং নিয়োগ-বাণিজ্যে করেছন ডা. শাহানা জাফর। ডা. শাহানা জাফরের সহযোগিতা নিয়ে বিগত কমিটির ট্রেজারার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য ব্যবসায়ী এম. এ সালাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে অনৈতিকভাবে অনেক অপকর্ম করেছেন প্রকাশ্যেই। দুর্নীতিবাজ এই চক্রের অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল বলেই সোসাইটি পরিণত হয় দুর্নীতির আখড়ায়। তাদের অবাধ অনিয়মে অন্যরাও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী ম্যানেজিং বোর্ড ভেঙ্গে দেয়া হলেও বিএনপি’র কর্মী পরিচয়ে আওয়ামীপ্রেমী ডা. শাহানা জাফর পূর্বের মতোই ক্ষমতাসীন বিভিন্ন জনের সাথে সখ্য গড়ে তুলছেন এবং তাদের নাম ব্যবহার করে সোসাইটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। সাম্প্রতি সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অলৌকিকভাবে হাত করে পূর্বের স্থানে এখনো বহাল রাখেন। এছাড়াও ডাঃ শাহানা জাফরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে ১২ টি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দুর্নীতির সত্যতা প্রমাণিত হওয়া স্বত্বেও তার বিরুদ্ধে সোসাইটি এখনো নিরবতা পালন করছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে এই দুর্নীতির অন্যায় অপকর্মের পিছনে বিশেষ সহযোগী হিসেবে আছেন সোসাইটির বর্তমান ২ ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য- ডা: শেখ আবু জাফর ও অধ্যাপক ডাঃ ইমরান বিন ইউনূস মদদ রয়েছে বলে জানা গেয়ে। সোসাইটির উক্ত বোর্ড সদস্যগণের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সুযোগ সৃষ্টি করছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে।
সুশীল সমাজ মনে করেন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এ দেশের জনগণের নিকট একটি আপদকালী নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। আর তাই জনগণের নির্ভরশীলতার এই প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কমুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এইসব কর্মকর্তাদের অপসারনের জন্য জোর দাবি করেন।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।