বুধবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চা শ্রমিক সন্তানের

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকের সন্তান হরিবল বোনার্জী জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন হলেও শিক্ষার আলো দিয়ে জয় করে এসেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর। এবার পালা উচ্চশিক্ষার। তাতেও দমেনি এই অদম্য মেধাবি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’-এ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সন্ধা ৭টায় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ঢাবির ওয়েবসাইটে। এতে দেখা যায় হরিবল বোনার্জি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ২০২৪ সালে এইচএসসি ও ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। হরিবল বোনার্জী মৌলভীবাজারের চা অধ্যুষিত এলাকা শ্রীমঙ্গল উপজেলার হুগলিছড়া চা বাগানের শ্রমিক অনিল বোনার্জীর ছেলে।এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চিত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, থাকা-খাওয়া, লেখাপড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন হরিবল। তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চাচ্ছেন। এ সময় হরিবল বোনার্জী বলেন, আমার গল্পটা নিদারুণ কষ্টের। ২০০৮ সালে পরিবার প্রাইমারিতে ভর্তি করেন। সে সময়ে আমি পড়াশোনা যে করতে পারব তার নিশ্চয়তা ছিল না। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আমাকে ভর্তি করা হয়। ব্র্যাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতি ছিল না। সে কারণে ভর্তির পর তিন বছর আমি লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়ে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হই।তিনি বলেন, ২০১২ সালে মূলত আমার আনুষ্ঠানিক পড়ালেখায় হাতেখড়ি। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হই এবং সাধারণ বৃত্তি লাভ করি। ২০১৭ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। সেখান থেকে ২০১৯ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হই এবং ২০২২ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পরবর্তীতে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হই। আমার লেখাপড়াটা সম্পূর্ণই আমার উপরই নির্ভর ছিল। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিদের পড়তে হয় ব্রেইল পদ্ধতিতে। আমাদের বইগুলো থাকে একটু ভিন্নরকম। এই ধরনের বইগুলো সরকার শুধুমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাপায়। মাধ্যমিক পরবর্তী পর্যায়ের বইগুলো সরকারিভাবে ছাপানো হয় না।যার কারণে আমরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে সরকারিভাবে পড়াশুনার সুযোগটা পাই নাই। তবুও আমি মৌলভীবাজার সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পড়াশুনা করি সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে। থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাই এইচএসসি পর্যন্ত। কলেজের জার্নি যখন শুরু হয় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পাই। হরিবল বোনার্জীর বাবা অনিল বোনার্জী বলেন, আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলার হুগলিছড়া চা বাগানের একজন চা শ্রমিক। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই অনেক চেষ্টা করছে। সে বলে বাবা আমি লেখাপড়া করতে চাই। তখন আমি জানি না এতটুক লেখাপড়া কিভাবে করবে। সকলের সহযোগিতায় আমার ছেলের এ ফলাফল। আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভর্তি, থাকা-খাওয়া ও পড়ালেখার করার খরচের টাকা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়