মঙ্গলবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভারতীয় সীমান্তে পচছে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ, ২ রুপি কেজি

সংবাদের আলো ডেস্ক: বাংলাদেশের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে সীমান্তে পচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ। ভারতের পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো বাংলাদেশ। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি না হওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পানির দরে অর্থাৎ মাত্র ২ রুপি কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মাহাদিপুর-সোনামসজিদ সীমান্তে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ রুপিতে। ৫০ কেজির এক বস্তা পেঁয়াজের দাম মিলছে মাত্র ১০০ রুপি। অথচ নাসিক থেকে ১৬ রুপি দরে কেনা এসব পেঁয়াজ পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে সীমান্তে পৌঁছাতে খরচ পড়েছিল ২২ রুপি। সেই পেঁয়াজ এখন প্রায় বিনামূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।

মালদহের স্থানীয় খুচরা বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম ২০-২২ রুপি, তখন মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে মাহাদিপুর সীমান্তে ক্রেতারা এক বস্তা পেঁয়াজ পাচ্ছেন মাত্র ২ রুপি কেজি দরে। রপ্তানিকারকদের দাবি, বাংলাদেশ হঠাৎ আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা জানান, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা সীমান্তে রপ্তানির জন্য পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন। ঘোজাডাঙ্গা, পেট্রাপোল, মাহাদিপুর ও হিলি সীমান্তে অন্তত ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ করা হয়েছিল, যার বাজারমূল্য কোটি কোটি রুপি। এখন এসব পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছে। ক্ষতি কমাতে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে ভালো পেঁয়াজ থেকে পচা পেঁয়াজ আলাদা করছেন।

সাধারণত মাহাদিপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শুধু এই সীমান্ত এলাকাতেই প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন। তাদের কেনা দাম ছিল কেজিতে ২২ রুপি। বাংলাদেশে রপ্তানি করতে পারলে তারা ৩০-৩২ রুপি দর পেতেন, যাতে কেজিতে ৮-১০ রুপি লাভ থাকত।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশি আমদানি-রপ্তানি গ্রুপ এক নোটিশে জানায় যে, বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভারতীয় পেঁয়াজের ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) সীমিত করেছে। অথচ বছরের এই সময়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে এবং বর্তমানে সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাজিরুল শেখ নামক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা কেউ ৫০ ট্রাক, কেউ ৭০ ট্রাক পেঁয়াজ নাসিক ও ইন্দোর থেকে কিনে বড় লরিতে করে মালদহের গুদামে এনেছিলাম। ২২ রুপি কেজি দরে কেনা এসব পেঁয়াজ এখন পচতে শুরু করেছে। তাই বাধ্য হয়ে ২, ৬, ৮ বা ১০ রুপি কেজিতে বিক্রি করে দিচ্ছি।’

আরেক ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই মাস আগেও যখন রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল, আমি ৩০-৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ পাঠিয়েছি। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় আমাদের স্টক পচতে শুরু করে। তাই দেরি না করে শতাধিক শ্রমিক লাগিয়ে পেঁয়াজ বাছাই করে লোকাল মার্কেটে যা দাম পাচ্ছি, তাতেই বিক্রি করছি। বাংলাদেশ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে তারা এখন পেঁয়াজ নেবে না। আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, নইলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

এদিকে পানির দরে পেঁয়াজ কিনতে পারলেও এতে খুশি নন ভারতীয় ক্রেতা খাইরুল হক। তিনি বলেন, ‘রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলার কারণে পেঁয়াজের বাজারের এই করুণ দশা। ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতিতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা ২ রুপিতে পেঁয়াজ কিনছি, একটু ভালো মানেরটা ৮-১০ রুপিতে। অথচ আমাদের বাজারেই এর দাম ২০-৩০ রুপি।’

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়