মঙ্গলবার, ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পিতৃ স্নেহের আড়ালে খুনির মুখোশ, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের মেয়েকে খুন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিজের শিশু কন্যাকে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন এক পিতা। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়েটির বাবা জাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম ও ভাবি কহিনুর বেগমকে।

শনিবার (১০ মে) সকালে বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে স্থানীয় স্কুলছাত্রী জান্নাতি আকতারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, মেয়েটির মাথায় ছিল গুরুতর আঘাতের চিহ্ন। প্রথমে নিহত জান্নাতির জ্যাঠা খলিল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তার দাবি ছিল, দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ জমির প্রতিপক্ষরা রাতের আঁধারে জান্নাতিকে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে। তবে এলাকাবাসীর শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল, এ ঘটনার সঙ্গে পরিবারেরই কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাদের সন্দেহের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ, এবং এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়। রোববার (১১ মে) রাতে অভিযান চালিয়ে জান্নাতির বাবা জাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহেদুল হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাহেদুল ইসলাম ও তার ভাই খলিলের সঙ্গে প্রতিবেশী মকবুল পাটোয়ারি গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এছাড়া একই পরিবারের আরেক ভাই রফিকুল ইসলামের সঙ্গেও তাদের জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। রফিকুল অভিযোগ করেন, “জাহেদুল ও খলিল আমাদের নানা সময়ে মারধর করেছে, প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। ওরা বলতো, ‘আমাগো মারি ফেললে সন্দেহ হইব, তাই নিজের মেয়েকই মাইরা গোষ্ঠিরে ফাঁসাইতে চায়।’” স্থানীয়দের দাবি, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে খলিল সরাসরি সহযোগিতা করেছেন।

ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তারা আরও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, খলিলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় রুহুল আমিন (উকিল) ও আব্দুল কাদেরও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারেন। কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। পিতার হাতে সন্তানের এমন মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। জাহেদুল হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন এবং তার দেওয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহৃত কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

” তিনি আরও জানান, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে এবং ঘটনায় জড়িত যেকোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক শিশুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল একটি বিকৃত প্রতিহিংসার পরিণতি। জমিজমার লোভে নিকটাত্মীয়দের ফাঁসাতে গিয়ে নিজ সন্তানের জীবন কেড়ে নেওয়া—এই ঘটনা সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়