সোমবার, ৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঘুষ না পেয়ে যুবকের হাত ভাঙল পুলিশ!

সংবাদের আলো ডেস্ক: রিমান্ডে নেওয়ার পর আসামির পরিবার ঘুষ না দেওয়ায় থানা হেফাজতে এক যুবকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা কক্সবাজারের টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম।

আসামি আব্দুর রহমান (২১) নামের ওই যুবকের পরিবারের দাবি, এসআই মাজহারুল ইসলাম প্রথমে পুলিশের সোর্সের মাধ্যমে তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় পুলিশ হেফাজতেই যুবকের ওপর চলে বেধড়ক নির্যাতন- যার একপর্যায়ে ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়।

জানা গেছে, আদালতে অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং রিমান্ডকালীন নির্যাতনের আলামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলেন। তবে এখনও অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ প্রশাসন।

ওই যুবকের পরিবারের ভাষ্য, একটি প্রেমঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে টেকনাফের এক প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে সাজানো হয় অপহরণের মামলা। বাদী পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাজহারুল ইসলামের। এমনকি তদন্তভার তিনি নিজেই নেন। ৫ এপ্রিল আব্দুর রহমানকে টেকনাফের মিনা বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরদিন থানায় আনার পরই, আব্দুর রহমানের পরিবার জানতে পারে, রিমান্ডে নির্যাতন এড়াতে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা।

পরিবারির দাবি, আব্দুর রহমানকে থানায় রিমান্ডে নেয়ার পর হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। পিটুনির একপর্যায়ে ছুটে যায় তার হাতের হাড়। কিন্তু এই ঘটনায় থানার ভেতরে কেউ কোনো বাধা দেয়নি, বরং নির্যাতনের সময় বাইরে বারবার পুলিশ সোর্সরা ফোন করে পরিবারের সদস্যদের চাপ দিচ্ছিল ঘুষের টাকা দিতে।

আব্দুর রহমানের বড় ভাই আব্দুর শুক্কুর বলেন, “একজন সোর্স ফোন করে জানায়, তোমার ভাইকে যদি মারধর থেকে বাঁচাতে চাও, ৫০ হাজার টাকা লাগবে। আমরা বলি, এত টাকা কই পাব? বাবার রিকশাভাড়ার সংসার। ওরপরে কয়দিন পরই জানলাম- রিমান্ডে ওর হাত ভেঙে গেছে।”

আদালত চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুর রহমানের মা বেগম বাহার বলেন, “আমি ভাবিনি ঘুষ না দিলে পুলিশ এমন করবে। আমার ছেলের হাতের হাড় ভেঙে দিছে। বিচার চাই। গরিবের কি বিচার নাই?”

তিনি বলেন, “ওরা বলেছিল, টাকা দিলে মারবে না। আমরা দিতে পারিনি, তাই আমার ছেলেকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। এ কেমন রিমান্ড?”

আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিমুল মোস্তফা বলেন, “রিমান্ড মানে আইনানুগভাবে জিজ্ঞাসাবাদ। কিন্তু এখানে তা হয়নি। এসআই ঘুষ না পেয়ে আসামিকে ভয়াবহভাবে নির্যাতন করেছেন। বিষয়টি আমরা আদালতকে অবহিত করলে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং রিমান্ডে নির্যাতনের আলামতসহ মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলেন।”

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে যোগাযোগ করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে, রিমান্ড শেষে আব্দুর রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় তার ডান হাতের হাড়ে স্পষ্ট ভাঙনের চিহ্ন পাওয়া যায়। এক চিকিৎসক, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “রোগীর হাতের হাড় ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমরা চিকিৎসা পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছি। এছাড়া, রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগটিও রোগীর পরিবারের কাছ থেকে শুনেছি।”

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এসআই মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে এসআই মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, তিনি টেকনাফের ইয়াবা সিন্ডিকেটের কয়েকজন চিহ্নিত সদস্যের সঙ্গে ‘ম্যানেজমেন্ট’ লেনদেনে জড়িত। কখনো নিরীহদের বিরুদ্ধে মামলা, কখনো অপরাধীদের ছাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টেকনাফ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন এক স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী, যিনি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তিনি বলেন, “এসআই মাজহারুল ইসলামসহ টেকনাফ থানার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে হয়রানি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং অপরাধীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ বহুদিনের। এসব এখন টেকনাফে অলিখিতভাবে ‘ওপেন সিক্রেট’।”

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “রিমান্ডে আসামিকে শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ রয়েছে, শারীরিকভাবে আঘাত করার কোনো নিয়ম নেই। যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এই বিধি লঙ্ঘন করে আসামিকে মারধর করে থাকেন, তাহলে আদালতের নির্দেশনার আলোকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ঘটনার ৫ দিন পার হলেও, এসআই মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়