মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

শিশু ধর্ষণ ও আত্মহত্যার মামলায় নেত্রকোনায় তিনজনের মৃত্যুদন্ড রায় দিয়েছে আদালত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনায় আলোচিত শিশু পান্নাকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছে নেত্রকোনা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও একলক্ষ টাকা অর্থ দন্ড অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়ে আদালত।

আজ সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ডক্টর এ কে এম এমদাদুল হক।

সাজাপ্রাপ্ত একই এলাকার গফুর মিয়ার ছেলে যুবলীগ কর্মী(২৬), কাজল সরকারের ছেলে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের কৃষি বিষয়ক উপ সম্পাদক অপু চন্দ্র সরকার (২৩) ও মৃত চান মিয়ার ছেলে সুলতান (৩০)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে গত ২০১৭ সনের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঠাকুরাকোনা রেলের পাশে থাকা রিক্সা চালক লালচান মিয়ার ১৪ বছরের শিশু কন্যা পান্নাকে ডেকে নিয়ে পাশের সুলতানের ফিশারি খামারের ঘরে সংগবদ্ধ ধর্ষণ করে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও মেয়েকে না পেয়ে মা আল্পনা আক্তার সহ অন্যরা সুলতানের খামারের ঘর থেকে উদ্ধার করে। এরপর রাতেই আসামিরা পরিবারটি ঘরে গিয়ে কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে আসে। পরদিন সকালে শিশু পান্নার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পাশের আরেকটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে।
এ ঘটনায় পান্নার মা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। পরে দাফন করতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনা এলাকাবাসীর মাঝে প্রকাশ পেলে আদালতের মাধ্যমে ১০ সেপ্টেম্বর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের পর পুনরায় লাশ দাফন করা হয়।

পরবর্তীতে আসামি কৌশিক ও মামুনকে পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর আটক করে। তাদের দেয়া জবানবন্দি মূলক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলাটি পুনরায় ফাইল হয়। এরপর তিন নম্বর আসামী খামার মালিক সুলতান মিয়াকেও আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে ১৮ সনের ৫ এপ্রিল পুলিশ চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করে। এদিকে এক নং আসামী কৌশিক জামিন নিয়ে বাইরে এলেও অন্য দুজন হাজতে থাকে। দীর্ঘ নয় বছর বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত শেষে ১৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক উক্ত রায় দেয়। রায় ঘোষণাকালে তিন জন আসামিই উপস্থিত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আসামিদের উপযুক্ত সাজা প্রদানের জন্য রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী, পান্নার মা ও নারীবাদী সংগঠন সহ জেলা প্রশাসক সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য নানা ভাবে প্রভাবিত হওয়ায় মামলাটি জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। এ নিয়ে সর্ব মহলের বিচার প্রার্থনার দাবী ওঠে।

শিশু পান্নার মা আলপনা আক্তার খাতুন আদালতের রায় সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, আমার মেয়ের ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে আমি খুশি হলাম। আমি নয় বছর ঘুরেছি। নয় বছর কান্না করতে করতে মেয়ের বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এখন আমি বিচার পেয়েছি তাতে আমি খুশি। আমার মেয়ের আত্মাও শান্তি পাবে।

জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ নুরুল কবির রুবেল জানান, আজকে আলোচিত শিশু পান্না ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে এই মামলায় আমরা রাষ্ট্রপক্ষে থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। শিশু পান্নাকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে আদালত প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে প্রত্যেককে ১০ বছরে কারাদণ্ড অন্যথায় একলাখ করে অর্থদণ্ড দিয়েছে। আসামিরা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হওয়ায় ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলো। এর কারণেই মামলাটির রায় পেতে দীর্ঘ ৯ বছর সময় লেগেছে।

এদিকে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, আজকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পান্না হত্যার রায় হয়েছে। প্রতিটি মিটিং সেমিনারে মানুষ বারবার প্রশ্ন করেছেন কেন মামলাটি রায় হচ্ছে না বা কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে আমরা প্রতিনিয়ত মামলাটির খোঁজখবর নিয়েছি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মামলাটি যেন বিলম্বিত না হয় কিংবা ধামাচাপা না পড়ে সেজন্য আমরা চেষ্টা করেছি। আজকে তার অবসান হয়েছে। অপরাধীরা সর্বোচ্চ বিচার পেয়েছে। এখন এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া এবং আমরাও চাইবো নেত্রকোনার ভয়ংকর এই ঘটনার রায়টি যেন দ্রুত কার্যকর হয়।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়