শুক্রবার, ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দরিদ্রের কর্মসংস্থানে প্রহসন: ফুলবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে সরকারের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান ও কর্মসূচি-৩ (ইজিপিপি) এর ৪০ দিনের মাটিকাটা প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেলের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কর্মহীন মৌসুমে অতি দরিদ্র পরিবারের স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত দরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল এবং চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এলাকাবাসী, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফুলবাড়ী উপজেলা আহ্বায়ক আব্দুল হাই সিদ্দিকীর অভিযোগ, প্রকল্পের শ্রমিক তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে ২৬২ জন হতদরিদ্র শ্রমিক এই প্রকল্পের আওতায় আসার কথা। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান তার মনোনীত ১৯৯ জনকে লটারির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করেন এবং অবশিষ্ট ৬৩ জনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরত চকিদার, ঝাড়ুদার এবং চেয়ারম্যান ও সচিবের ঘনিষ্ঠজনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েও কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে মাত্র ৩০-৩৫ জন সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে লটারির আয়োজন করা হয়। অথচ প্রকল্পের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণকে অবহিত করা হয়নি। ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা আবেদন বা অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হুজুর আলী বলেন, “আমার কোনো জমিজমা নেই, কাজও নেই। মাটিকাটা প্রকল্পে নাম থাকলে সংসার চালাতে কিছুটা সাহায্য হতো। আমি আইডি কার্ড দিয়েছিলাম, কিন্তু পরে শুনি লটারিতে আমার নাম ওঠেনি।” একই ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ প্রকল্প দরিদ্রদের জন্য, কিন্তু লটারিতে যাদের নাম উঠেছে তাদের অনেকেই স্বচ্ছল।

অনেকে আবার চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক। ইউনিয়নের অনেক মানুষ জানতেও পারেনি লটারি হয়েছে।” বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “এই প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, অনিয়মের তদন্ত করে প্রকৃত দরিদ্রদের নিয়ে নতুন তালিকা প্রণয়ন করা হোক।” অন্যদিকে এলাকার সাধারণ মানুষও অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দলীয় লোকজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন।

এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল মোবাইল ফোনে বলেন, “আমি স্বচ্ছতার জন্য লটারির মাধ্যমে ২৪৫ জন দরিদ্র এবং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন চকিদার-ঝাড়ুদারের নামসহ মোট ২৬২ জনের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিসে জমা দিয়েছি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রকৃত দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, সরকারি প্রকল্পে এমন অনিয়ম শুধু প্রকল্পের উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ করছে না, বরং দুর্নীতির মাধ্যমে দরিদ্রদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করছে। সরকারের উচিৎ দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত হতদরিদ্রদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়