বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চাটমোহরে ‘গরিবের ডাক্তার’ আলমগীরের বদলী বাতিল ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বুলবুলের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন

সঞ্জিত চক্রবর্তী, পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেনের বদলী বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে নানা অনিয়ম, চিকিৎসা বাণিজ্য এবং রোগী হয়রানির অভিযোগে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুলকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ সময় দাপ্তরিক কাজে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা পাবনার সিভিল সার্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল দশটায় চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন নাগরিক সমাজ, চাটমোহরের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, আসাদুজ্জামান লেবু, মোতালেব হোসেন, তানভীর জুয়েল লিখন, শাহীন হোসেন, ফুলচাঁদ হোসেন শামীম, হাসানুজ্জামান সবুজ, ফয়সাল কবীর, সাজেদুর রহমান সেজান, ইমরান হোসেন, হাসিনুর রহমান, জান্নাতুন নাঈম জুঁই সহ অনেকে। বক্তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে জরুরি রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে পাবনা সদর হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। ভর্তি রোগীরাও সঠিক সেবা পাচ্ছেন না।

এ ছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে দুর্নীতি, চিকিৎসা বাণিজ্য ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে। বক্তারা বলেন, ডা. আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখতেন না এবং কোনো কমিশনভিত্তিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

যেকারণে তিনি গরীবের ডাক্তার হিসেবে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর এই মানবিক আচরণ ও সততা হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও টেস্ট সিন্ডিকেটের স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণে তাঁকে মাত্র এক বছরের মাথায় দু’দিন আগে সুজানগর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, এসবের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল।

তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই হাসপাতালে থাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার মনমতো না চললে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। নানা অনিয়ম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। তার কারণে ভাল কোনো চিকিৎসক এখানে বেশিদিন থাকতে পারেন না। তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সবসময় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও তিনি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চলছেন।

তাই অবিলম্বে গরীবের ডাক্তার আলমগীর হোসেনের বদলী বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখতে হবে এবং দুর্নীতিবাজ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল কে চাটমোহর থেকে অপসারণ করার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। আগে থেকে বিক্ষোভ আন্দোলনের খবর পেয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে এদিন হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন ডা. ওমর ফারুক বুলবুল।

আর দাপ্তরিক কাজে চাটমোহরে হাসপাতালে যান পাবনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ। এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে বসে থাকা সিভিল সার্জন ক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার তোপের মুখে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ তাদের আশ্বস্ত করেন, ‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে ডা. আলমগীর হোসেন কে চাটমোহর হাসপাতাল ফেরানো হবে।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক বুলবুলের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং তিনি আপাতত চাটমোহর হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, ‘সকালে আমি হাসপাতালে ছিলাম না। বিকেলে ডিউটি ছিল আমার।

ওই সময় না থাকার কারণে আসলে কি হয়েছে আমি তেমন কিছু জানি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। ডা. আলমগীরকে বদলীর বিষয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমার যেটা দায়িত্ব আমি সেটা পালন করি।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়