সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আমার দায়িত্ব কে নেবে, অন্য ছেলে: আদালতে সানাই

সংবাদের আলো ডেস্ক: শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে যৌতুক দাবির অভিযোগে আলোচিত মডেল সানাই মাহবুবের করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন স্বামী আবু সালেহ মূসা। এদিন শুনানিতে আদালতে দাঁড়িয়ে সানাই মাহবুব বলেন, ‘যদি তার স্বামী আবু সালেহ মূসা ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তবে তিনি সংসার করতে রাজি আছেন।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মূসা।

গত ৬ অগাস্ট সানাই মাহবুব আদালতে মূসার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। আসামিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করে আদালত। এরপর মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মূসা।

মূসার পক্ষে জামিন শুনানি করেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আপনি (আদালত) মামলা আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেছি। আমরা একটা হলফনামা দিয়েছি যে আমরা সংসার করতে চাই। আমরা বিষয়টি আপস করে ফেলব। তার জামিন প্রার্থনা করছি।’

সানাই মাহবুবের আইনজীবী মিঠুন সাহা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘যৌতুক দাবির পাশাপাশি আসামি বাদীর কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছে। সেই টাকার কী হবে? টাকা পয়সা নিয়েছে, আবার যৌতুক চাচ্ছে। তাছাড়া তিনি অপরাধ তো করেছেন।’

উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক মূসার কাছে জানতে চান তিনি কী করেন?

মূসা জানিয়েছেন তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তবে কয়েক মাস আগে তার চাকরি চলে গেছে। এরপর আদালতের আরও কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন মূসা। তিনি আদালতের কাছে সানাই মাহবুবের সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করেন।

আদালতে কথা বলেন সানাই মাহবুবও। ‘এখন কি করছেন?’ আদালতের প্রশ্নে সানাই মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা ২০১৮ সালে মারা গেছেন। গ্রামে মা থাকেন। মাঝে মাঝে তার কাছে গ্রামে যাওয়া হয়।’

শুনানিতে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আদালতকে সানাই বলেন, ‘আমি আমার শাশুড়িকে সম্মান করি। নিজের মাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকেও দেখভাল করতে হয়। আমার বাবাও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আমার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা দুইটা বোন, কোনো ভাই নেই। আমার দায়িত্ব যদি আমার স্বামী না নেয়, অন্য ছেলে নেবে? সে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে না। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়।’ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সানাই মাহবুব। ‘আসামি তো সংসার করতে চাই।’

সানাই মাহবুব বলেন, ‘ও যদি চায় আমি সংসার করবো। তবে আমার ভরণপোষণ নিতে হবে। স্বামীরা যেভাবে স্ত্রীকে দেখাশোনা করে, যেভাবে দেখভাল করতে হবে। আমি বাসা ভাড়ার অর্ধেকের বেশি টাকা দিয়ে আসছি।’

উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, ‘এটা আপোসযোগ্য মামলা। আসামি সংসার করতে চায়। তাকে সুযোগ দিতে হবে।’

তখন সানাই মাহবুব বলেন, ‘সে আবার কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছে। ভয়েস রেকর্ড আছে। সে আমার টাকা না দিলে, কোথায় টাকা পাবো? আবার বাবা মারা গেছে। আমি কোথায় টাকা পাবো? আমার কাছে টাকা চাইবে কেন?’

আপোসের শর্তে আদালত মূসার জামিনের আদেশ দিয়েছেন বলে সানাই মাহবুবের আইনজীবী মিঠুন সাহা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে আমরা দুইপক্ষ বসবো।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২২ সালের ২৭ মে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময়ে সানাই মাহবুবের পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ১৫ ভরি সোনা দেওয়া হয়। পরে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করবে জানিয়ে স্বামী আবু সালেহ মূসা টাকা চান। সেসময় সানাই নিজের ১২ লাখ টাকা ও বাবার কাছ থেকে আরও ৭ লাখ টাকা এনে দেন। কিন্তু সেই টাকা সালেহ মূসা খরচ করে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি সানাইয়ের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। সেটি দিতে অস্বীকার করলে সানাইয়ের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালান। টাকা না দিলে সংসার না করার হুমকি দেন।

সানাইয়ের অভিযোগ, সংসার টিকিয়ে রাখতে বিষয়টি একাধিকবার পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার স্বামী ২২ লাখ টাকা দাবি করেই যাচ্ছেন। সংসার চালিয়ে নিতে গত ৭ ও ২২ জুলাই স্বামীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান তিনি। নোটিশ পাওয়ার পরও সানাইয়ের আফতাবনগরের বাসায় গিয়ে মূসা টাকা দাবি করেন এবং না দিলে সংসার করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়