মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা : প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

সংবাদের আলো ডেস্ক: জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল–২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা। তবে রেজওয়ানুলের জেরা শেষ হলেও সজলের বাবার সাক্ষ্য চলমান। বাকি সাক্ষ্যগ্রহণ পরবর্তী দিনে হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

এর আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন।

পরে সাংবাদিকদের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় জীবিত ছিলেন একজন। এমন বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে আটজন পলাতক। সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে আজ আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।

গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনসহ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন বিচারকার্যের শুরুতে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে করা আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে উপস্থিত আট আসামিকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।

ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একই সঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া, রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হন তিনি।

গত ১৩ আগস্ট স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলার আট আসামিকে হাজির করে পুলিশ। একই সঙ্গে পলাতক সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজনকেও হাজিরের কথা ছিল। তবে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে সরকারি খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেপ্তারসহ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, ৬২ সাক্ষী, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়