এত চেষ্টার পরও দিল্লির আকাশ থেকে ঝরল না এক ফোঁটা বৃষ্টি
সংবাদের আলো ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বহুদিন ধরেই ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরানোর পরিকল্পনা করছিল সরকার। ধারণা ছিল, আকাশে বিশেষ রাসায়নিক ছড়িয়ে মেঘকে বৃষ্টিবাহী করে তুললে দূষিত বায়ুমণ্ডল শুদ্ধ হবে, মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু কোটি কোটি রুপি ব্যয়ে পরিচালিত এ পরীক্ষার প্রথম দিনেই দেখা গেল ভিন্ন বাস্তবতা। আকাশে রাসায়নিক ছড়ালেও মেঘ সাড়া দিল না, এক বিন্দু বৃষ্টিও পড়েনি শহরে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিনব্যাপী দুটি ধাপে উড়োজাহাজের মাধ্যমে মেঘে সিলভার আয়োডাইডসহ বিশেষ যৌগ স্প্রে করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, মেঘের ভেতরে থাকা আর্দ্র বাষ্পকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিতে রূপান্তর করা। কিন্তু ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদিন অপেক্ষা করেও কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, যা ক্লাউড সিডিং সফল করার মতো পর্যাপ্ত নয়।
আইআইটি কানপুরের সহযোগিতায় নেওয়া এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি। উদ্যোগটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৃষ্টি সৃষ্টির মাধ্যমে পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর মতো দূষণকারী কণার মাত্রা কমানো। যদিও আইআইটি কানপুরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র কণার ঘনত্ব কিছুটা কমেছে, যা ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য ইতিবাচক তথ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তবে পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রকল্প ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও স্বল্পস্থায়ী সমাধান। তাদের যুক্তি, বায়ুদূষণের মূল কারণ যেমন শিল্পকারখানার নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণসাইটের ধুলা নিয়ন্ত্রণ না করলে কৃত্রিম বৃষ্টি কোনো স্থায়ী ফল দেবে না। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, এমন পরীক্ষায় অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে দূষণ উৎস নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি ও নীতিমালা কঠোর করা জরুরি।
এদিকে বিরোধী দল আম আদমি পার্টি এই উদ্যোগকে ‘অকার্যকর ও লোকদেখানো পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে জানায়, কোটি টাকা ব্যয় করে মেঘ ডাকা গেল, কিন্তু বৃষ্টি এলো না। দলের নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কি এখন দেবতার কাছে বৃষ্টি ভিক্ষা চাইতে হবে?’
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই দিল্লির বায়ু আরও বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দূষণের তীব্রতায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে। তাই এবারও দূষণ মোকাবিলায় কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যর্থতা নগরবাসীকে নতুন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। সাধারণ মানুষ এখন জানতে চাইছে—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কেন তারা এখনও সুস্থ বাতাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন?


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।