ভূঞাপুরে যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষকদের ভরসা নৌকা, বাইক ও ঘোড়ার গাড়ি


আখতার হোসেন খান, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার দুর্গমচরাঞ্চলে শিক্ষকদের যাতায়াতের ভরসা নৌকা, বাইক ও ঘোড়ার গাড়ি। ভূঞাপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দাসী নৌকা ঘাট। অপর দিকে ১২ কিলোমিটার দূরের পথ নলিন জগৎপুরা ঘাট থেকে প্রতিদিন নৌকা সকাল ৮টায় ছেড়ে যায় দুর্গম চরাঞ্চল গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের ৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর উদ্দেশ্যে।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে বহনকারী নৌকাটি ‘মাস্টার সার্ভিস নৌকা নামে পরিচিত। নৌকাথেকে নামার তারা বাইক ও ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। নদীর তীর ও নরম বালির রাস্তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। শুস্ক মৌসুমে তাঁদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় এবং বর্ষাকালে উত্তাল যমুনা নদী পারাপারের জন্য জীবন বাজি রাখতে হয়।
অনেক সময় এই পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা শিক্ষকদের দেরিতে স্কুলে যাওয়া এবং আগে স্কুল ছাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষকদের দাবী, বেতনের সিংহভাগই ব্যয় করতে হয় যাতায়াতের জন্য । নানা ভোগান্তির কারণে বিঘিœত হচ্ছে পাঠদান ব্যবস্থা। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী শিক্ষকদের। চরাঞ্চলে আবাসিক সুব্যবস্থা না থাকায় ও ভূঞাপুর থেকে প্রতিদিন স্কুলে যেয়ে পাঠ দান করতে হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গাবসারা ইউনিয়নে চরের মধ্যে ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা অপরদিকে অর্জুনা ইউনিয়নে চরের মধ্যে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা রয়েছে । গাবসারা ইউনিয়নের ভদ্রশিমুল দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমাইয়া সুলতানা সুইটি বলেন, ভাড়া বাইক অথবা ঘোড়ার গাড়িতে যেতে হয়, তখন আমার ৩শত টাকা করে শুধু বাইক ও ঘোড়ার গাড়িতে খরচ হয়। আবার বর্ষা মৌসুম প্রতি মাসে ১২শত টাকা নৌকা ভাড়া দিতে হয়।
বাসুদেবকোল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আরো ৪৫ মিনিট পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক খারাপ। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে যমুনার উত্তাল ঢেউকে পাড়ি দিয়ে আমাদের স্কুলে যেতে হয়। আমরা এত কষ্ট করে যাতায়াত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান উন্নয়নে কাজ করছি। সরকার আমাদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে, যদি চর ভাতা-দূর্গম ভাতা প্রদান করেন তাহলে আমরা কিছুটা হলেও সান্ত¡না না পাবো।
এক্ষেত্রে শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া দুপুরের খাবার কোন হোটেল নেই, মুদি দোকানে শুকনো খাবার পাওয়া গেলেও তা মানসম্মত নয়। অজুর্না ইউনিয়নের পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম কে বলেন, প্রতিদিন ভূঞাপুরের ফলদা থেকে অটোরিক্সা যোগে দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নলিন বাজারে যাই।
সেখান থেকে এক কিলোমিটার বালুর চর হেঁটে নৌকা যোগে নদী পাড়ি হয়ে আবার ২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আমাকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। বিদ্যালয় ছুটির পর একই ভাবে আমাকে বাড়ি ফিরতে হয়। আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্কুলেই রাত্রি যাপন করতে হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহিনুর ইসলাম বলেন, চরের শিক্ষকদের বিষয়গুলো আমাদের দপ্তর কর্তৃক অবগত আছে। অনেক জেলার চর, হাওর এবং দূর্গম পাহাড় অঞ্চলে স্কুলের শিক্ষকদের চর ভাতা বা দূর্গম ভাতা চালু থাকলেও এই ভূঞাপুরে চরাঞ্চলের যাতায়াতের জন্য কোন ধরনের ভাতা চালু নেই। এটা চালু হলে ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।