মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কামারখন্দে চুরি-ছিনতাইয়ের আতঙ্ক, স্থানীয়রা দুষছেন পুলিশকে

বিশেষ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার একটি কামারখন্দ উপজেলা। এই উপজেলার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে উত্তরবঙ্গগামী গুরুত্বপূর্ণ সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক। সাম্প্রতিক সময়ে এই মহাসড়ক ও আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বিশেষ করে গত শুক্রবার কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ওভারব্রিজ এলাকায় ভাইরাল হওয়া ডাকাতির ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কামারখন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে যাওয়া আঞ্চলিক সড়কগুলো – মফিজ মোড় থেকে নান্দিনা হাটখোলা, সীমান্ত বাজার থেকে বিয়ারা বাজার এবং নলকা মোড় থেকে জামতৈল বাজার পর্যন্ত এখন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সন্ধ্যা নামলেই এসব সড়কে নেমে আসে নীরবতা, কারণ স্থানীয়রা ভয় পান ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কায়। এমনকি অনেকে রাতে গ্রামমুখী না হয়ে মূল মহাসড়ক ঘুরে যাতায়াত করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ মফিজ মোড় এলাকায় কথা হয় ৪৫ বছর বয়সী মোঃ মজনুর সাথে। তিনি বলেন, মফিজ মোড় থেকে নান্দিনা হাটখোলা পর্যন্ত দুইটি ওভার ব্রিজ আছে। এই ব্রিজে কিছু কিছু পোলাপান উশৃঙ্খলা আচরণ করে, আমরা ভ্যান দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সার্চ করে টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। পুলিশ কিছুই করেনা।

কত কত জায়গাতে দেখা যায়, পুলিশ সাথে থেকে সহযোগীতা করে৷ আমরা গরীব মানুষ, কামাই করে টাকা বাড়িতে আনতে পারিনা। আবু সিদ্দীক নামের একজন স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, কোনাবাড়ি ও বড়ধুলের পাশাপাশি এই জায়গায় ইতিপূর্ব থেকে দেখা যায় ডাকাতি হয়। টাকা পয়সা চুরি করে। রাত্রে ৭টা বা ৮টার পরে এদিক দিয়ে আসিনা। ঈদ উপলক্ষ্যে পুলিশকে মহাসড়কে দেখা গেলেও, বাকি সময় দেখিনা। আবার তারা আসে কিনা? সেটিও বলতে পারবনা।  সন্ধ্যা হলেই এই রাস্তাগুলোতে ভ্যান এর সংখ্যা কমতে শুরু করে।

এটির কারণ হিসেবে ভ্যানচালকরা বলেন, আমরা সন্ধ্যার পরে মাগরিবের আযানের পরে এই রাস্তা দিয়ে আসিনা৷ আসলেই দিনভরা গাড়ি চালিয়ে যে টাকা কামাই করি৷ সে টাকা কেড়ে নেয়। অস্ত্রও দেখায়, তবে পুলিশ ভেতরে ঢুকেনা। তারা রাস্তাতেই থাকে, ভেতরে কি হয়? সেটির খোঁজ নেয়না৷ কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ি গ্রামের হাবু সরকারের পরিবারের গল্পটি যেন এই সমস্যারই প্রতিচ্ছবি। হাবু সরকারের প্রায় ২লক্ষ টাকার একটি গরু চুরি হয় প্রায় আট দিনের ব্যবধানে। এরপর তার ছেলের আরেকটি গরু, যার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। সেটিও চুরি হয়। হাবু সরকারের পুত্রবধূ মোছাঃ গোলাপী বলেন, তালা কেঁটে শ্বাশুড়ির গরু চুরি হলো, আমার গরুও চুরি হলো।

আমরা সবাই গরীব মানুষ। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেলো, তবে গরু বাছুর বের করে দিলো না। তারা (পুলিশ) ইচ্ছে করলে বের করে দিতে পারতো। নান্দিনা এলাকার সমাজসেবক মুনসুর আলী বলেন, এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই হয়৷ আমাদের গ্রামে একজনের টিউবয়েল, আরেকজনের ব্যাটারি হারিয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে মানুষ থানাতে যায় না, গেলেও আসলে কোনো সুরহা হয় না।

মোঃ রফিকুল ইসলাম নামের একজন কৃষক বলেন, গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, যার কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই। দেশের যে অবস্থা, এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। কে বা কাহারা এসব করছে, বড় অঘটন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুলিশ প্রশাসনের এদিক থেকে কোনো প্রকার সহযোগীতা পায়নি। কামারখন্দ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক বলেন, সন্ধ্যা হওয়ার পরেই মানুষ চলাচল করতে পারেনা৷ বিগত সময়ের চেয়ে চুরি ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে৷

কামারখন্দে ইতিপূর্বে অনেক চুরির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ কিন্তু এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে যে আসামী ধরবে বা অপরাধীদের নির্মুল করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটি করেনি৷ কামারখন্দ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো। কামারখন্দ চুরি ছিনতাই অধ্যুষিত একটি এলাকা ছিলো। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা ইতিমধ্যে সান্ধ্যকালীন দুটি টিম দিয়েছি। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনা৷ এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কামারখন্দ সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, আমাদের জেলার ফোকাল পার্সন যারা আছে, উনাদের সাক্ষাৎকার নিন। আমার কোনো তথ্য জানা নেই। তবে স্থানীয়দের দাবি, অভিযোগ না আসার কারণ হলো থানায় গেলেও তারা কার্যকর প্রতিকার পান না। ফলে দিনকে দিন মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থার সংকট বাড়ছে, আর বেড়ে চলেছে রাতের অজানা ভয়। তবে এই উপজেলার মানুষ দিন কিংবা রাত, প্রতিটা মুহুর্তে আতঙ্ক ছাড়া চলাচল করতে চান।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়