বুধবার, ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙ্গণে দিশেহারা মানুষ, বিলিনের পথে ঘরবাড়ি

উজ্জ্বল অধিকারী: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গ্রামগুলি হল, কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রাম। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাঙ্গণের তান্ডবে এ সব গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমি, বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট টুকুও বিলিনের পথে।

গত ১ মাস আগেও যেখানে বাড়িঘর ছিল, এখন সেখানে অথৈ পানি। এখানকার জমিতে প্রচুর পরিমানে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গী, সব্জি, ধনিয়া সহ সব ধরণের ফসল হয়ে থাকে। এছাড়া এখানকার কৃষকেরা ষাড় গরু লালন পালন করে বাড়তি আয় করে। ফলে যমুনা নদী বেষ্টিত সোনাতনী ইউনিয়নের মানুষ আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে নতুন করে যমুনার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। ফলে এ এলাকার অধিকাংশ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখানকার কৃষকেরা নতুন করে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ধীতপুর গ্রামের ৭০ উর্ধ্ব কালু মোল্লা বলেন, এই চরে প্রচুর পরিমানে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গী, সব্জি, ধনিয়া সহ সব ধরণের ফসল হয়ে থাকে। ৮৮ সাল থেকে এখানে ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ ভাঙ্গা দিছি। পটল সহ নানা ফসল বুনে ভালোই চলছিলাম। এখন বাড়িঘর ও ফসলি জমি সবকিছু নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। এ ঘরটিও ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙ্গে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো, কি খাবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।  এ বিষয়ে ওই গ্রামের মনোয়ারা বেগম(৬৫) জানান, এ পর্যন্ত ১৪ বার তার বাড়িঘর ও ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

আবারও তিনি ভাঙ্গণের কবলে পড়েছেন। এখন তার রাত কাটে ভাঙ্গণ আতংকে। এ বিষয়ে রজিনা খাতুন বালি বলেন, সোনাতনীর বালুমাটি সোনার মতই ছিল, এই বালু মাটিতে যা বুনেছি তাই ভালো জন্মেছে। শাকসব্জি, তরুতরকারি শজপাতি বুনে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। এখন ভাঙ্গণের কবলে পড়ে সবকিছু নদীতে চলে যাচ্ছে। ফলে আমরা সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এখন আমরা কোথায় যাবো, কি খাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। এ গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত ৫/৬টি গ্রামের প্রায় ৩/৪‘শ বাড়িঘর যমুনা নদীতে চলে গেছে।

এই ভাঙ্গণরোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপাওে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ বিষয়ে ফজর আলী ব্যাপারী বলেন, ভাংতে ভাংতে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। চ্যাংরা থেকে বুড়া হয়ে গেলাম তবুও ভাঙ্গণরোধে কোনো সরকারই ব্যবস্থা নিল না। তিনি বলেন, বিগত সরকার আমলে স্থানীয় এমপির কাছে ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিতে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তো এখন নাই। বিদায় নিয়েছে। এ সরকার যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা বাঁচবো। না হলে এ ভাবেই আস্তে আস্তে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কুরসি গ্রামের মওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গণে কুরসি গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর ফসলি জমি সবকিছু বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এই ভাঙ্গণ ঠেকাতে না পাড়লে মানুষজন অসহায় হয়ে পবে। ভাঙ্গণরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবী দ্রুত ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিন।   এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, গত ৬ বছরে এ ৩টি ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে কমপক্ষে ২৮০ হেক্টোর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

আবার এর বিপরিত পাশে ৯০ হেক্টোর বেশি জমি জেগে উঠেছে। ফলে এ ইউনিয়নে জমির পরিমাণ কমেনি। তবে যে সব ফসলি জমি নতুন করে ভেঙ্গে যাচ্ছে , সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিক ভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গণ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ভাঙ্গণরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলে দ্রুত বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়