ভয়ভীতি-প্রলোভনের ঊর্ধ্বে উঠে ভোট দেয়ার আহ্বান সিইসির
সংবাদের আলো ডেস্ক: ভোটারদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোট শুধু নাগরিক অধিকারই নয় বরং পবিত্র আমানত ও দায়িত্ব। এই দায়িত্ব ভোটাররা সচেতনভাবে পালন করবেন বলে বিশ্বাস করি। যেকোনো ভয়ভীতি, প্রলোভন, প্রবঞ্চনা এবং সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। আপনাদের নিরাপদ ও উৎসবমুখর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এই কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে সিইসি বলেন, মহান বিজয় দিবসের আগে দেশবাসীকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একইসঙ্গে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে চব্বিশের অভ্যুত্থান পর্যন্ত সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার সকল আন্দোলনে আহত, নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ আমাদের অমোঘ শক্তি। জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল মালিকানা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানসম্মত নির্বাচনের অনুপস্থিতি প্রায়শই আমাদের ঐতিহ্য এবং সামষ্টিক প্রত্যাশাকে ম্লান করেছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ভাই-বোন, সন্তানদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান। যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং বিশ্ব দরবারে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্ভুল, পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা। গত এক বছরে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি ভোটবিমুখ এবং বাদ পড়া প্রায় ৪৫ লক্ষ ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২১ লক্ষাধিক মৃত ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির অভাবে পুরুষের সাথে নারী ভোটারের ব্যবধান বেড়ে প্রায় ২৯ লক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। বাদ পড়া নারী ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সেই ব্যবধান কমিয়ে আনা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আইন সংশোধন করে ভোটার হওয়ার যোগ্যতার তারিখ প্রতি বছর ১ জানুযারির পরিবর্তে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত দিন ঠিক করেছে। এর ফলে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত যোগ্য তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। গত ১৮ই নভেম্বর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৪৮ লক্ষ ১৪ হাজার ৯০৭ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪২ জন।
দায়িত্ব নেয়ার পর কমিশনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, গত এক বছরে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের জবাবদিহিতা বাড়াতে বহুবিধ আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন করেছি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধিতে যথাযথ পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশের পাশাপাশি কমিশনের নিজস্ব মূল্যায়ন ও অংশীজনের পরামর্শের ভিত্তিতে এই সংস্কার করা হয়েছে। এই উদ্যোগ সম্পন্ন করতে সহযোগিতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ সকল অংশীজনদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
নির্বাচন নিয়ে সিইসি বলেন, বিভিন্ন কারণে এবারের নির্বাচন আমাদের জাতির ইতিহাসে অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্তের নির্বাচন। এবার জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে যা নতুন অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এই নির্বাচন সক্ষমতা প্রমাণ করে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের অনন্য সুযোগ। তৃতীয়ত, এই নির্বাচন দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের পর দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ধারা প্রবর্তনের দাবি রাখে। চতুর্থত, প্রায় অকার্যকর পোস্টাল ভোট ব্যবস্থাকে পরিমার্জন করে এই নির্বাচনে একটি কার্যকরী রূপ দেয়া হচ্ছে।
আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। আর ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থীরা আপিল করতে পারবে। ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আপীল নিষ্পত্তি করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি। পরদিন ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। পরদিন থেকে প্রচারণার শুরু হবে। এই প্রচারণা ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের কথা উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তাদের প্রথমবারের মতো ভোটের আওতায় আনা হচ্ছে। একইভাবে প্রথমবারের মতো আইনি হেফাজতে থাকারাও ভোটের আওতায় আসছেন। এছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি কর্মচারী এবং নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন। আগামী ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে ভোটদানের জন্য প্রবাসীরা নিবন্ধন করতে পারবেন।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অসত্য তথ্য ও অপতত্ত্বের বিস্তার দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রতিপক্ষ দল ও প্রার্থীকে হেয় করার পাশাপাশি নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করে এবং নির্বাচনকে কলুষিত করে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অসত্য তথ্য শেয়ার করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ সময় অসত্য এবং অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারিত কোনো তথ্যে কান না দেয়ার অনুরোধও করেন তিনি।
সবশেষে দল ও প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আচরণবিধি মেনে একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে ভোটারদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনই আপনাদের লক্ষ্য হোক। এ সময় নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর বলেও জানান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।



সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।