বৃহস্পতিবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: মির্জা ফখরুল

সংবাদের আলো ডেস্ক: সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছে বিএনপি। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয় বলেও মনে করছে দলটি।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যে সব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যেকোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্তির পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।’

তিনি বলেন, ‘বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশের বিষয়টি বিল আকারে না দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাকালে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট গণভোটে উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়নি।’

ফখরুল বলেন, ‘দফাসমূহের বিপরীতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির উপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘ প্রায় ১ বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি।’

সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা, ২৭ দফা এবং ভিশন-২০৩০ কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তি ও শক্তিসমূহ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছে। সুতরাং, রাষ্ট্র কাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়