হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে কৃষকের স্বপ্ন দাফন


আমানুল্লাহ আসিফ, শেরপুর প্রতিনিধি: ঋণ করে দেড় একর জমিতে বোরো ধান লাগাইছিলাম। বন্যহাতির দল আমার আধাপাকা ধান খাইয়া সাবাড় কইরা দিছে। আমরা রাতে গ্রামবাসীরা মিইলা মশাল জ্বালিয়ে চিৎকার করেও ফসল রক্ষা করতে পারিনি। এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি—কীভাবে সংসারের খাদ্যের যোগান দেব? শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারোমারী আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক রসুল মাহমুদুরের মতো অনেকেরই একই প্রশ্ন।
দুই সপ্তাহ ধরে ৫০-৫৫ টি ছোট বড় বন্যহাতির দল উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমের আধাপাকা বোরো ধান খেয়ে ও পা দিয়ে পিষিয়ে মাড়িয়ে ফেলছে। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে দাফন হয়ে যাচ্ছে কৃষকের পরিশ্রম আর স্বপ্ন। সারাদিন পাহাড়ে থাকলেও সন্ধ্যা গড়িয়ে না আসতেই ফসলে হানা দেয় হাতির দলটি। ধান রোপণের পর থেকেই নিজ উদ্যোগে ফসল রক্ষায় টং তৈরি করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। দিনের বেলা টং ঘরে বসে এবং রাতে মশাল জ্বালিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে হাতি তারাচ্ছেন তারা। অনেকে আবার সোনার ফসল রক্ষা করতে আধাপাকা ধানই কেটে ফেলছেন। যার ফলে চাহিদার চেয়ে অনেক কম ফলন ঘরে উঠছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল রাতে সীমান্তের জঙ্গল ছেড়ে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের মায়াঘাঁসি ও ফেকামারি জঙ্গলে চলে আসে হাতির পালটি। দিনের বেলা খাবারের জন্য বিভিন্ন টিলায় ঘোরাঘুরি করলেও শেষ বিকেলে হাতির পালটি বোরো ধানের খেতে হানা দিতে লোকালয়ে নেমে আসে। দুই সপ্তাহে পানিহাটা, মায়াঘাঁসি ও ফেকামারী গ্রামের ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকের প্রায় তিন একর জমির আংশিক ফসল হাতির দলটি খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। শুধু ধান নয় মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য ফসলও খেয়ে ও পিষ্ট করে নষ্ট করে ফেলছে বন্যহাতি। চরম হতাশা আর আতংকের মধ্যে দিন কাটছে সীমান্তবর্তী চাষীদের।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, তাদের আবাদি জমির ধান এখন প্রায় পেকে এসেছে। আর কয়েকদিন পড়েই কাটা যেতো এসব পাকা ধান। এমন সময়ে বন্যহাতি এসে ধান খেয়ে ফেলেছে। তাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। সামনে খাদ্যসংকটে পড়বেন বলেও জানান তারা।
উপজাতী কৃষাণী আশালতা নেংওয়া, বিজার কুবি, হোসেন আলীসহ অনেকেই বলেন, বিকাল হলেই বাবুরা (হাতির পাল) নেমে আসে পাহাড় থেকে। প্রতি বছর তাদের আবাদি জমি খেয়ে সাবাড় করছে। সোলার ফেন্সিং দিয়ে তাদের কোনো উপকারে আসছে না। সোলার ফেন্সিং দুমড়েমুচড়ে হাতির দল চলে আসে আবাদি জমিতে। সরকারিভাবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।
বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী জানান, হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সদস্যরা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত হাতি যেসব কৃষকদের ফসল নষ্ট করেছে তাদেরকে বন বিভাগের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, সীমান্তে হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা সমাধানের স্থায়ী পথ খুঁজছে উপজেলা প্রশাসন।আবেদনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।