চাটমোহরে শিক্ষকদের কর্মবিরতি: অভিভাবকদের সহায়তায় চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা
সঞ্জিত চক্রবর্তী, পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার চাটমোহরে সহকারী শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির মধ্যে স্থগিত না করে অভিভাবকদের সহযোগিতায় তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) পরিচালনা করছেন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। সোমবার (১ ডিসেম্বর) উপজেলার আফ্রাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার কক্ষগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অভিভাবকেরা, আর প্রধান শিক্ষক নিজে পরীক্ষা তদারক করছেন।
উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন সোমবার থেকে। একই সময়ে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হওয়ায় তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। জটিল পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আফ্রাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামিনুল ইসলাম বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েকজন অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে আমরা পরীক্ষা পরিচালনা করছি।
সহকারী শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচিতে থাকায় এই মুহূর্তে বিকল্প উপায় নেই।” পরীক্ষা নিতে অংশ নেওয়া এক অভিভাবক আমেনা খাতুন বলেন, “শিক্ষকেরা পরীক্ষা নেবেন না জানানোয় আমরা অভিভাবকেরাই এগিয়ে এসেছি। যাতে বাচ্চাদের কোনো সমস্যা না হয়, সেই চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ।” অন্যদিকে কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া এক সহকারী শিক্ষক শ্রাবন্তী বলেন, “দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। কেবল আশ্বাসের ওপর ভরসা করা যায় না। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।” অভিভাবকদের একটি অংশ এ পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অভিভাবক সুমি খাতুন বলেন, “সারা বছর ক্লাস নেওয়ার পর পরীক্ষা চলাকালে কর্মবিরতি মেনে নেওয়া কঠিন। পরীক্ষার পর আন্দোলন করলে আমরাই তাদের পাশে থাকতাম।
” এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকায় প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষাগুলো আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি, যেন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।” তিনি জানান, উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়েই একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কর্মবিরতি ও দাবি আদায়ের আন্দোলনের কারণে চাটমোহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন ও অভিভাবকদের উদ্যোগে পরীক্ষা চালু থাকলেও, আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে এর প্রভাব পড়বে—এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।



সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।