কাবুলে আবারও পাকিস্তানের বিমান হামলা, নিহত ১০


সংবাদের আলো ডেস্ক: পাকিস্তান আবারও শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এএফপির কাছে খবরটি নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা।
এক সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের পর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয়েছিল। উভয় পক্ষের বহু সেনা এবং বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ঘটে ওই সংঘর্ষে।
একজন শীর্ষ তালেবান কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে পকতিকা প্রদেশের তিনটি জায়গায় বোমা হামলা চালিয়েছে। আফগানিস্তান এর প্রতিশোধ নেবে।’ এক প্রাদেশিক হাসপাতালের কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, পাকিস্তানি হামলায় ১০ জন বেসামরিক নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিশু।
এই সীমান্ত সংঘর্ষ শনিবার থেকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে ঐতিহাসিক সফরে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত।
এরপর তালেবান পাকিস্তানের দক্ষিণ সীমান্তে আক্রমণ শুরু করলে, ইসলামাবাদও শক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
গত বুধবার এ যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসলামাবাদ জানিয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি চলবে। তবে কাবুল জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যতক্ষণ না পাকিস্তান এটিকে লঙ্ঘন করে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মুহাম্মদ আসিফ কাবুলকে ‘ভারতের প্রোক্সি’ এবং ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী’ বলে অভিযুক্ত করেছেন।
এদিকে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তাদের বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে আক্রমণ না করলে আক্রমণ না করার জন্য। তিনি আফগান টেলিভিশন চ্যানেল অ্যারিয়ানাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যদি তারা আক্রমণ করে, তবে আপনি আপনার দেশকে রক্ষা করতে বাধ্য।’
সুরক্ষা ইস্যু উদ্বেগের মূল কারণ। পাকিস্তান আফগানিস্তানকে পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেছে, যা কাবুল অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান শুক্রবার এক সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তান বারবার তার উদ্বেগ জানিয়ে এসেছে, আফগান ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে, পাকিস্তানের নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলায় একটি সামরিক ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাতজন পাকিস্তানি আধাসামরিক সেনা নিহত হয়। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপির একটি গোষ্ঠী।
শুক্রবার আফগান সীমান্ত শহর স্পিন বোলডাকের বাসিন্দারা বলেছেন, সব স্বাভাবিক ছিল। ৩৫ বছর বয়সী নানি এএফপিকে বলেছেন, ‘সব কিছু ঠিক আছে, সব কিছু খোলা।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভীত নই, তবে সবাই আলাদাভাবে চিন্তা করে। কেউ বলে তারা তাদের সন্তানদের অন্যত্র পাঠাবে। কারণ পরিস্থিতি ভালো নয়, তবে আমি মনে করি কিছু হবে না।’
জাতিসংঘের আফগানিস্তান সহায়তা মিশন জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ৩৭ জন নিহত এবং ৪২৫ জন আহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রতি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। এএফপির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা বৃহস্পতিবার কয়েক শ লোককে দাফন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখেছেন। এর মধ্যে শিশুদের মরদেহও ছিল।
৪২ বছর বয়সী নিমাতুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি। তারা ভয় পাচ্ছে, যুদ্ধ আবার শুরু হবে। তবুও তাদের ঘর ছেড়ে ব্যবসা করার জন্য বের হতে হবে।’
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।