বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

তাড়াশের সংগুই দিঘীর সুফলভোগীরা এখনও বন্দী আওয়ামী লীগ নেতাদের জালে: নিরব প্রশাসন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের প্রত্যান্ত গ্রাম মাধাইনগর। এই গ্রামে অবস্থিত সংগুই দিঘী নামে ৩২ বিঘা আয়তনের একটি বিশাল দিঘী পুকুর। জানা যায়,বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সমাজ ভিক্তিক মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত ওই দিঘীটিতে মাছ চাষ করে সফলতা অর্জনের জন্য এই দিঘীর চারপাড়ে অবস্থিত আদিবাসী সম্প্রদায় ও হতদরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের সুফলভোগীদের মাঝে প্রতিবছর লিজ দিয়ে আসছে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অফিস।সেই পুকুরে সুফলভোগীরা মাছ চাষ করে লভ্যংশ সমানভাবে সকল সদস্যরা ভাগ করে নিয়ে আসছে। তবে মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা  নীতিমালা অনুযায়ী এই দিঘী কোন ভাবেই অন্য কারও কাছে সাব লিজ দিতে পারবে না।

দীর্ঘদিন ধরে সংগুই দিঘী পুকুর সুফলভোগী মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড নিবন্ধনের মাধ্যমে মৎস্যাচাষ করতেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপজেলা মৎস্যলীগের নেতাদের চোখ পরে এই সংগুই দিঘীর উপর। গত ১৭ বছর কাগজে কলমে  সুফলভোগীদের নামে লিজ থাকলেও সুফলভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দিঘীটি সাবলিজ নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করে লাভবান হতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সাবলিজ না দিলে সুফলভোগীদের দেওয়া হতো মামলা ও হুমকি ধামকি।   গত ২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের পতন হলেও বহাল তদবিরে দিঘী দখলে রেখেছেন উপজেলা মৎস্যলীগ নেতা মোস্তফিজুর রহমান মোস্তফা ও দাদন ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম।

উপজেলা  মৎস্য অফিস ২০২৫ সালে পূর্বের লিজ বাতিল করে নতুন কমিটির নামে লিজ প্রদান করলে মোস্তফা ও সালাম সাব লিজ নিতে প্রস্তাব দেন নতুন কমিটিকে। নতুন কমিটির আদিবাসী সুফলভোগীরা সাব লিজ দিতে রাজি না হলে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করতে থাকেন মোস্তফা ও সালাম। এখন পযন্ত সুফলভোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দেওয়া অভিযোগ উঠেছে। মামলা মাথায় দিয়ে নিঘুম রাত কাটাচ্ছে ৮১টি আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা।  ভুক্তভোগী সুফলভোগী সুনীল সরকার বলেন, আওয়ামী লীগের ১৭ বছর তো জোরপূর্বক দখল করে মাছ চাষ করছেই। এখন আবার ৫ আগস্টের পরও আবার শুরু করছে ।আমরা রাজি হচ্ছি না আমাদেরকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ইতোমধ্য কয়েকটি মামলা করেছে তারা। আরেক সুফলভোগী ভুক্তভোগী সাগরিকা বলেন, আমাদের সামনে থেকে পুকুর থেকে মাছ মেরে নিয়ে যায় তারা।

অথচ আমাদেরকে কোন মাছই  দেয় না। সংগুই দিঘী পুকুর সুফলভোগী মৎস্যচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক চন্দ্র বসাক বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার যাওয়ার পরে মোস্তফা ও সালামরা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে পুকুরটি সাবলিজ নেওয়ার জন্য ।চাঁদাবাজিসহ আমাদের নামে তিনটি মামলা করেছে তারা। আমরা আদিবাসী মানুষ আমরা এখন কোথায় যেয়ে দাঁড়াবো। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন,  মৎস্যচাষীরা এখনো আটকে আছে আওয়ামী মৎস্যলীগের নেতাদের জালে। প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলা হয় আদিবাসী সুফলভোগীদের উপর। চোখের সামনেই ধরে নিয়ে যায় শত শত মন বড় বড় মাছ। নিরবে দেখা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা তাদের। আমরা চাই মৎস্যলীগের হাত থেকে রক্ষাপাক অসহায় সুফলভোগীরা। অভিযোগের বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্যলীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা  বলেন, আমার নামে কোন সাবলিজ নেই। যা আছে সব সালামের নামে।

আমি কারও সাথে খারাপ আচারণ করেনি। জোর করে কোন পুকুর নেয়নি। তবে আমরা সমম্বয় করে কিছু পুকুরে মাছ চাষ করেছি। দল ক্ষমতায় থাকতে ছেলে পেলেরা একটু এমন সেমন করেছে। আর দাদন দার ও মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন,সাবলিজ নেওয়ার বিধান সরকারীভাবে না থাকলেও তাড়াশের সিংভাগ পুকুর সাবলিজ দিয়েই চাষাবাদ করে।আমিও তার বাইরে নয়। সুফলভোগীদের টাকা দিয়ে সাবলিজ নিয়ে দীঘদিন ধরে এই দিঘীতে মাছ চাষ করে আসছি। এবার যারা লিজ নিয়েছে তাদের কিছু টাকা দিয়েছি চারমাস পর আবার নতুন করে ডিড করতে চাইলে তারা রাজি হয় না। তবে আগের কমিটি ২০২৭ সাল পযন্ত আমাকে ডিড করে দিয়েছে। তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আফসার আলী বলেন,হাসিনা বিদায় হলেও এখনো বিদায় হয়নি তার দোষররা। তারা সুফলভোগীদের মুখের আদার কেরে খেয়েছে। এখনো খেতে চায়। প্রতিবাদ করলেই কোটে মামলা করে তারা।  প্রশাসন তদন্ত করে দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনবে।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশশুল আজাদ বলেন,কোন ভাবেই কেউ এই দিঘী পুকুর সাব লিজ নিতে পারবে না। আমরা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেবো খুব দ্রুতই । তবে  উভয় পক্ষেই মামলা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন,আদালতে দায়ের করা মামলার কোন কপি এখনো আমাদের হাতে পাইনি। তবে গতকাল সুফলভোগীরা বাদি হয়ে সালাম ও মোস্তফাসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ্য করে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়