দেশের ৪১ জেলায় যাচ্ছে কাজিপুরের কম্বল
আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: উত্তরের হিমেল বাতাসের বইতে শুরু করার সাথে সাথে ব্যস্থতা বেড়েছে সিরাজগঞ্চের কাজিপুর উপজেলার কম্বল পল্লীতে। উপজেলার কম্বল পল্লীর রাজধানীখ্যাত শিমুলদাইড় বাজারসহ আশপাশের ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বর্শিভাঙ্গা, সাতকয়া, বিলচতল, ঢেকুরিয়া, পলাশপুর, বেলতৈল, শ্যামপুর, কবিহার, চালিতাডাঙ্গাসহ প্রায় তেত্রিশটি গ্রামের ৩৬ থেকে ৪০ হাজার নারী ও পুরুষ এখন দিনরাত একাকার করে কম্বল তৈরি করছেন।
উত্তরের হিমেল হাওয়া তাদের কাজের গতি যেমন বেড়েছে তেমনি সংসারের অর্থনীতির চাকাও তরতর করে সমৃদ্ধির পথে এ গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন গত সোমবার বিকেলে শিমুলদাইড় বাজারে গিয়ে দেখে গেছে প্রতিটি গুদাম ঘরের সামনে দায়ি রয়েছে ট্রাক। শ্রমিকেরা সেই ট্রাকে কম্বল লোড করছেন। সেইসাথে কম্বল পল্লীর একমাত্র কম্বল তৈরির কারখানায় দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকেরা। বাহারি সুতোয় বোনা হচ্ছে নানা রংঙের ও নানা মাপের কম্বল। পাশেই বিশাল এক লম্বা ঘরে বসেছে সেলাই মেশিনের কারিগরেরা।
উৎপাদিত কম্বলের মুড়ি সেলাই করছেন তারা। এরপর নিজস্ব দোকানের সিল লাগিয়ে তাবিশেষ ব্যাগে ভরা গুদাম ঘরে রাখা হচ্ছে। চাহিদামতো সেই গুদাম থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারগণ দেখেশুনে পছন্দের ডিজাইন ও মাপের কম্বলের অর্ডার করছেন। সেই অর্ডারকৃত কম্বল ট্রাকে ভরছেন শ্রমিকেরা। সবমিলে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে শিমুলদাইড় বাজারে প্রতিদিন তিনশ থেকে চারশ শ্রমিক লোড আনলোডের কাজ করছেন।
দামের ক্ষেত্রে আছে রকমফের। এখানে শুধু আশি টাকা থেকে পৌণে ছয় হাজার টাকায় কম্বল বিক্রি করা হয়। শিশুদের জন্যে একটি পায়জামা ১২ টাকা থেকে দুশো টাকা এবং জামা ৩০ টাকা থেকে চারশ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় । এসময় কথা হয় মেসার্স সহীহ ট্রেডার্সের মালিক শরিফ সোহেরের সাথে।
তিনি জানান, বাজারে আমাদের কম্বলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামে সস্তা, বাহারি ডিজাইন রাস্তা সংল্গ বাজার থেকে গাড়ি লোড করার সুবিধা, কোন চাঁদাবাজির খপ্পড়ে ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়না, সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় এসব সুবিধার কারণে এখানকার কম্বলের চাহিদা এখন দেশ জুড়ে। তিনি আর জানান, এখন দেশের ৪১ টি জেলায় যাচ্ছে আমাদেরতৈরি কম্বল। চাহিদার কতা বিবেচনা করে আমি নিজস্ব কারখানা বসিয়েছি। সেখানে সস্তায় বিভিন্ন মাপ ও রংঙের কম্বল তৈরি হচ্ছে যার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
ব্যবসায়ী এহসানুল হক শাহীন জানান, আগেতো ধান চালের ব্যবসা করতাম। এখন কম্বলের ব্যবসায় রয়েছি কয়েক বছর যাবৎ। বছরের চারমাস আমাদের ব্যবসা হয়। কিন্তু যে পরিমাণ লেনেদেন হয় তাতে সারা বছরের কাজের লাভ আমাদের টেকে। ফলে এই ব্যবসায় নেমেছি। হাজী চান মিয়া জানান, তিনযুগ পূর্বে থেকেই এই ব্যবসার সাথে জড়ি আছি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে শিমুলদাইড় বাজার কেন্দ্রিক এই ব্যবসা জমে উঠেছে। ব্যবসায় আসলে দ্রুত পাল্টে যায় ব্যবসার ধরণ। এই অঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষদের অনেকেই এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে কারখানা দিচ্ছেন। এমনি করে এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায়রলেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সারাদেশে শিমুলদাইড় বাজারের নাম ছড়িয়ে পড়েছে কম্বল শিল্পের কারণে। কম্বল শিল্প এখন এই উপজেলার ব্র্যান্ডিং এর মতো হয়ে গেছে। ঝামেলামুক্ত পরিবেশে শ্রমিকেরা এখানে কাজ করছেন দিনরাত।
এই শিল্পের প্রসারে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে আছে। কম্বল শিল্পের কারণে এখানে যারা কাজ করছে তাদের যাপিত জীবনে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিটি পরিবারেরই এখন একটি কমন গল্প রয়েছে। সেই গল্পের শিরোনাম কেবলই সমৃদ্ধির, কেবলই উন্নতির।


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।