সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিশ্ব বাঁশ দিবস আজ

সংবাদের আলো ডেস্ক: গ্রাম-বাংলার জীবনে বাঁশের অবদান অপরিসীম আর শহুরে জীবনে সৌন্দর্যের অংশ। বাঁশ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে যে আলাদা করে খেয়াল না করলেও প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই এর ওপর নির্ভর করি।

আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব বাঁশ দিবস। বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু ডে’। শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও, এই দিনটির পেছনে রয়েছে একটি ইতিহাস। এই দিবসটি ২০০৯ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বাঁশের উপকারিতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।

আজ চাইলেই আপনার প্রিয়জনকে বা কাছের বন্ধুকে উপহার দিতে পারেন বাঁশ অথবা বাঁশের তৈরি পণ্য। কিন্তু আজকের দিনে কেন বাঁশ নিয়ে এই বাড়াবাড়ি? কারণ, আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস।

বাঁশ মানেই যেন গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘর বানানো থেকে শুরু করে সাঁকো, ঝাড়ু, মাছ ধরার ফাঁদ কিংবা খেলনা — সবখানেই বাঁশের ব্যবহার। মজার ব্যাপার হলো, বাঁশকে অনেকে ‘গরিবের লোহা’ বললেও এখন এটি আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইন আর পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনেরও অংশ হয়ে উঠেছে। শহুরে ক্যাফের চেয়ার–টেবিল থেকে শুরু করে হাতে বানানো বাঁশের ব্যাগ পর্যন্ত।

বাঁশ এক দিনে প্রায় এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে — যা পৃথিবীর দ্রুততম বৃদ্ধি পাওয়া উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। আবার পান্ডার প্রধান খাবারও বাঁশের কচি পাতা। ভাবুন তো, পৃথিবী থেকে বাঁশ হারিয়ে গেলে শুধু আমাদের সাঁকো নয়, পান্ডার মুডও একেবারে অফ হয়ে যাবে!

পরিবেশবিদরা অবশ্য বাঁশকে নিয়ে একেবারে সিরিয়াস। কারণ এটি কার্বন শোষণ করে বাতাসকে পরিচ্ছন্ন রাখে, আর মাটিকে আঁকড়ে ধরে ভূমিক্ষয় ঠেকায়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে বাঁশ কেবল গ্রামীণ জীবনের বন্ধু নয়, বরং পৃথিবী বাঁচানোর এক সৈনিক।

তবে সত্যি বলতে, আমাদের জীবনে বাঁশের স্থান এতটাই মজবুত যে আলাদা করে দিবস পালনের দরকার আছে কিনা—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। গ্রামের কারও সঙ্গে আড্ডা দিলেই শোনা যাবে, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি কাজে বাঁশ কেমনভাবে মিশে আছে।

তবুও, ১৮ সেপ্টেম্বর একটু মজা করে বলা যায়—আজ বাঁশের দিন, তাই বাঁশের কদর করুন। কারণ বাঁশ শুধু কাঠামো নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ, হাস্যরসেরও অংশ।

বাঁশের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব বাঁশ সংস্থা (World Bamboo Organization) এই দিবসটি পালনের প্রস্তাব করে। বাঁশ একটি টেকসই এবং বহুমুখী সম্পদ, যা নির্মাণ, আসবাবপত্র, হস্তশিল্প এবং খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই দিনে, বাঁশের বিভিন্ন ব্যবহার এবং এর পরিবেশগত গুরুত্ব নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচী ও প্রচার চালানো হয়।

‘নেক্সট জেনারেশন ব্যাম্বো: সলিউশন, ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইন’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ১৯ তম বাঁশ দিবস। বাঁশ নিয়ে সমাজের যাবতীয় আলোচনা নেতিবাচক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাঁশ এখন কোটি টাকা উপার্জনের আকর্ষণীয় মাধ্যম। মানুষের মধ্যে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা ও বাঁশ সম্পর্কিত সচেতনতা ছড়িয়ে দিতেই পালিত হয় বিশ্ব বাঁশ দিবস। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাঁশ ও বাঁশজাত বিভিন্ন পণ্যের বহুল ব্যবহার রয়েছে। আর আজকের দিনটিও বাঁশের জন্য!

বিশ্বব্যাপী আসবাবপত্র কিংবা গৃহস্থালি প্রয়োজন ছাড়াও বাঁশ ব্যবহার করা হয় খাদ্য দ্রব্য হিসেবে। সবুজ বাঁশের ডালের ভেতরের অংশ অর্থাৎ বাঁশ কোড়ল অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়।

বৈশ্বিকভাবে বাঁশ শিল্পকে উন্নত করার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব বাঁশ সংস্থা। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ব্যাংককে অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেস চলাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় বিশ্ব বাঁশ দিবস।

সেবারের কংগ্রেস অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং দিনটিকে বিশ্ব বাঁশ দিবস হিসাবে মনোনীত করার প্রস্তাবে সম্মত হন। এই দিবস পালনের প্রস্তাব রেখেছিলেন সংস্থার তৎকালীন সভাপতি কামেশ সালাম।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ব্যাম্বু রিসোর্সেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায় চীনে। চীনে আছে ৫০০ প্রজাতির বাঁশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে রয়েছে ২৩২ প্রজাতি। আর ৩৩ প্রজাতির বাঁশ থাকা বাংলাদেশ আছে তালিকার অষ্টমে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়