ভাঙ্গুড়ায় ৫ জুয়েলারি দোকানের দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নৈশ প্রহরীকে বেঁধে রেখে কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুট
সঞ্জিত চক্রবর্তী, পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নৈশ প্রহরীকে বেঁধে রেখে চার জুয়েলারি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল সোনা ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার অষ্টমনিষা বাজারের পাঁচটি জুয়েলারি দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অষ্টমনিষা বাজারের পূর্ব দিকে আঁখি জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্স, মধু জুয়েলার্স, উত্তম জুয়েলার্স ও মাতৃ জুয়েলার্স স্বর্ণের দোকান। প্রতিদিনের মতো দোকানের কাজকর্ম সেরে দোকান তালাবদ্ধ রেখে চলে যান ব্যবসায়ীরা। বাজারে তিনজন নৈশ প্রহরী রয়েছেন। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অষ্টমনিষা বাজারে প্রবেশ করেই নৈশ প্রহরীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে।
এরপর আখি জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্স, মধু জুয়েলার্স ও মাতৃ জুয়েলার্স পাশাপাশি থাকায় দোকানগুলিতে তালা কেটে প্রবেশ করে সোনা ও নগদ টাকা লুট করতে থাকে। এরপর পাশের উত্তম জুয়েলার্সের তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। সেখানে সোনা ও টাকা বাহিরে যেগুলো ছিল সেগুলো তারা নিয়ে নেয়। এরপর দোকানের সিন্দুক ভাঙতে না পেরে দোকানের উপরতলাতে মালিক রঞ্জন কর্মকারকে ধরে শারীরিক নির্যাতন করে সিন্দুকের চাবি নিয়ে নেয়। চাবি নিয়ে সিন্দুকে রাখা বারো ভড়ি সোনা ১৫ লক্ষ টাকা ও একশ ভরি রুপা তারা লুট করে নিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, আঁখি জুয়েলার্স এর বিশ ভরি সোনা, ১৮০ ভরি রুপা ও নগদ ২০ হাজর টাকা, মা জুয়েলার্স ১১ ভরি সোনা ৩০০ ভরি রুপা ও নগদ চল্লিশ হাজার টাকা, মধু জুয়েলার্সে পাঁচ ভরি সোনা ৩ লাখ নগদ টাকা ও ২০০ ভরি রুপা, উত্তম জুয়েলার্সের বারো ভরি সোনা, ১৫ লাখ টাকা ও ১০০ ভরি রুপা এবং মাতৃ জুয়েলার্সে ২.৫ ভরি সোনা ২৫ ভরি রুপা দেড় লক্ষ টাকা ডাকাত দল লুট করে নিয়েছে।
ঘটনার বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রতন কর্মকার বলেন, আনুমানিক রাত দুইটার দিকে তার বাসাতে গিয়ে গেটে প্রচন্ড বেগে শব্দ করে ডাকাডাকি শুরু করে ডাকাতদল৷ বাড়ির মধ্য থেকে তারা কে জানতে চাইলে ডাকাত দল নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দেন। এরপরে তিনি আর তার বাড়ির গেট খোলেননি। আঁখি জুয়েলার্স এর স্বত্বাধিকারী আত্তাব আলী জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দোকানে এসে দেখেন তার দোকানে কিছু নেই। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ আলী জানান, তিনি অনেক টাকা ঋণ করে দোকান করেছিলেন। বর্তমানে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মধু জুয়েলার্স এর তপন কর্মকার কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, সোনা ও নগদ টাকা সহ তার প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়েছে ডাকাত দল ।
এতে তিনি নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। মাতৃ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী উত্তম কর্মকার বলেন, আমি বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলাম মেয়ে ডেকে বলে বাবা দেখো দোকানের মধ্যে শব্দ হচ্ছে। আমি ভয়ে এদিকে আসিনি পরে দেখি দোকান থেকে সব নিয়ে গেছে। ঘটনার বিষয় ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ভোরে ডাকাতি হওয়া দোকানগুলি ও এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ডিবি পুলিশ ঘটনাটির স্থান পরিদর্শন করে তদন্ত করবেন বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কেউ থানায অভিযোগ দেয়নি। ঘটনার বিষয়, ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বীকার করে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক (চাটমোহর সার্কেল) জানান, ডাকাতির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন টিম কাজ করছেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।