চলনবিলে রসুন চাষে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা, জমে উঠেছে মৌসুমি কর্মচাঞ্চল্য
খালিদ হাসান, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: খাদ্যশস্য ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চলনবিল অঞ্চলে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় বোনা আমন ধান কর্তন শেষে জমি পরিষ্কার করে কাদামাটিতে ‘সাদাসোনা’ খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন রোপণ শুরু করেছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
দিনমজুরদের পাশাপাশি কৃষক পরিবারের সদস্যরাও রসুন লাগানোর কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। কারণ, ক্ষেতের মাটি বেশি শুকিয়ে গেলে চাষের উপযোগিতা কমে যায়—এ জন্য বাড়তি সতর্কতা ও যত্ন নিতে হচ্ছে। চলনবিলের মাটিতে চাষে ও বিনাচাষে উভয় পদ্ধতিতেই রসুন রোপণ করা যায় এবং রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যেই গজায় চারা। কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে রসুনের ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বীজ ও উপকরণের দাম বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে।
ফলে এ বছর প্রতি বিঘায় রসুন চাষে ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরে উপজেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪০ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪৩৫ হেক্টর। এছাড়া বিনাচাষে রসুন আবাদ হয়েছে ৪৭০ হেক্টর জমিতে।
তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রসুন চাষকে কেন্দ্র করে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে কৃষক পরিবারগুলো। গারস্থ্য ও কৃষকের নিয়োগ করা নারী-পুরুষ বীজ রসুন থেকে কোয়া ছাড়ানো বা ‘রসুন ভাঙার’ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে কিশোর-কিশোরীরাও অংশ নিচ্ছে। অধিকাংশ কৃষক গ্রামের নারীদের এ কাজে নিয়োগ করছেন এবং প্রতিমণ রসুন ভাঙার মজুরি দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক মণ রসুন ভাঙতে সময় লাগে প্রায় দুই দিন। পাশাপাশি চলছে জমি প্রস্তুতসহ রসুন রোপণের কর্মযজ্ঞ।
নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম, রাজু ও সুজন আহমেদ জানান, রসুনের বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে, মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের চর হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক আজাদ আলী ফরিদুল বলেন, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন।
এখন পর্যন্ত বিঘাপ্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে রোপণ ও নিড়ানি বাবদ আরও ৮ হাজার টাকা যোগ হলে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। জানা গেছে, চলনবিল এলাকায় প্রায় দুই দশক ধরে বিনাচাষে রসুন আবাদ করে কৃষকেরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে তাড়াশ, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে এ পদ্ধতিতে রসুন চাষ দিন দিন বেড়েই চলছে।


সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।