সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

জাপানে বসে চাকরির পাশাপাশি বাংলাদেশে আমির হোসেনের অর্ধকোটি টাকার মাছের কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবিকার তাগিদে ২০১৭ সালে জাপানে যান কেএম আমির হোসেন। এখন পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। চাকরি করেন একটি রেস্টুরেন্টে। চাকরির পাশাপাশি হাতে থাকা মুঠোফোনে চালিয়ে যাচ্ছেন অনলাইন ব্যবসা। এই ব্যবসার পরিধি এখন অর্ধকোটি টাকার ঘরে। আমির হোসেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার এলাকার কৃষক জোফর আলীর ছেলে। শিক্ষাজীবনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন স্বপ্নবান এই তরুণ। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় জাপানে পাড়ি জমান। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানকার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি হয় তার। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত রয়েছেন। ২০২০ সালে জাপানে থাকা অবস্থায় মা রেশমা বেগম ফোন করে ইলিশ মাছ খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে আমিরকে বলেন, “বাবা আগের মতো কেন জানি ইলিশের স্বাদ-গন্ধ পাই না।” মায়ের সেই কথা মনে গেঁথে যায়, হন্যে হয়ে ইলিশ খুঁজতে থাকেন। পরিচিত একজনের মাধ্যমে চাঁদপুর থেকে তাজা ইলিশ এনে মাকে খাওয়ান। ইলিশ খেয়ে মা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলেন, “বহুদিন পর আসল ইলিশ খেয়েছি।

এখান থেকেই আসল ইলিশের ব্যবসার ধারণা মাথায় আসে তার। আমির ভাবলেন, যদি আমি এই ইলিশের ব্যবসাটা করি, তাহলে এমন শতশত মা, যারা আসল ইলিশ পাচ্ছেন না তাদের জন্য ইলিশ পেতে সহজ হবে। অপরদিকে নিজেরও কিছু ব্যবসা হলো। সিদ্ধান্ত নেন এবং রেশমা অনলাইন শপিং নামের একটি বিজনেস পেজ খুলে যাত্রা শুরু করেন। ২০২০ সালে ব্যবসা শুরুর প্রথম ২৮ দিনেই ১৪ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেন আমির। সেই থেকে যাত্রা শুরু। তবে ওই বছর বড় ধাক্কা খান তিনি। তার মা রেশমা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। মায়ের মৃত্যুর পর কোনো কিছুতেই মন বসছিল না তার। সবেমাত্র একটি ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছিলন, সেটিও থমকে গেল। মায়ের মৃত্যুর পর এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে আসেন আমির। মায়ের দাফন কাজ শেষে চলে যান চাঁদপুর ইলিশ ঘাটে। সেখানে গিয়ে কয়েকজন লোক সেট করেন। রেশমা অনলাইন শপিং পেজে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। কারণ ইলিশ কিনার আগে কাউকে এক পয়সাও দিতে হয় না। ইলিশ খেয়ে মজা পেলে টাকা দেবেন এই শর্তে ব্যবসাটি চলছে। তবে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কেউই এক পয়সাও মেরে খাননি তার।

বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির নদী ও সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করেন আমির হোসেন। এসবের ফাঁকে ২০২৩ সালে নিজ এলাকায় দারুল উলুম নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কমপ্লেক্স নামের একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন নিজ অর্থায়নে। ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থের ৮০ ভাগ চলে যায় এতিমখানার ফাণ্ডে। সার্বিক বিষয়ে আমির হোসেন বলেন, মায়ের ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে থেকে অনলাইনে ব্যবসাটির ধারণা আসে মাথায়। ইলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন নদী ও সামুদ্রিক মাছও বিক্রি হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন আমার প্রায় অর্ধকোটি টাকার ব্যবসা চলছে। মাছগুলো কেনা, প্যাকেট করা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হোম ডেলিভারি দেওয়াসহ সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা লোক সেট করা আছে আমার।

১০ জন লোক নিয়োজিত এসব কাজে। তাদের সবাইকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, কিছু লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, যদি কেউ মায়ের জন্য ইলিশ নেবেন বলেন, তাহলে তার কাছ থেকে কোনো লাভ নেওয়া হয় না। মাছ অর্ডার করার আগে অনেকেই বলেন “যদি আমি আপনার টাকা না দিই তাহলে কী করবেন”? তখন হাসতে হাসতে বলি, আমার টাকা আপনি মেরে খেতে পারবেন না, যদি আপনি স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনজন লোক প্রতারণা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ৩৩ হাজার টাকা, আরেকজন ১৮ হাজার এবং আরেকজন ১৩ হাজার টাকা মেরে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই, আমি বিশ্বাস করি যারা প্রতারণা করছে তারা আজ না হয় কাল আমার টাকা ফিরিয়ে দেবে।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়