ববি’তে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক শাটডাউন


ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) উপাচার্য অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন।এবং উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রশাসনিক শাট ডাউন চলমান রাখার ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় তারা দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত জুলাইয়ের আন্দোলনের পর একটি ভিন্ন ও ইতিবাচক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ছিল তাদের। সে লক্ষ্যে ৬ মাস আগে ২২ দফা দাবি উত্থাপন করা হলেও উপাচার্য তা আমলে না নিয়ে বরং ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ পুনর্বাসন করেছেন। পরবর্তীতেও বিভিন্ন দাবিদাওয়া উত্থাপন করা হলেও, তিনি সেগুলোও আমলে নেননি। বরং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এনামুল হক হৃদয় বলেন, “উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একাডেমিক কিংবা উন্নয়নমূলক কোনো কাজ না করে শুধুমাত্র আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনে মনোযোগী হয়েছেন। আমরা বারবার বিভিন্ন দাবি জানালেও তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। তাই এবার আমাদের এক দফা—উপাচার্যের পদত্যাগ। তার প্রেক্ষিতে আজ আমরা বিভিন্ন দফতরে তালা দিয়ে প্রশাসনিক শাট ডাউন ঘোষণা করেছি ।” শিক্ষার্থী এস এম ওয়াহিদুর রহমান বলেন, “উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আজ টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক দপ্তরে তালা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি দ্রুত মানা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ও আমরণ অনশনের দিকে যাব। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে একাডেমিক শাটডাউন ঘোষণা করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে।
” আরেক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, “ক্যান্সার আক্রান্ত শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হক জিমি উপাচার্যের কাছে সহায়তার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি। মাসের পর মাস তার আবেদনের কপি দপ্তরে পড়ে থাকলেও উপাচার্য স্বাক্ষর করেননি। ফলে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন জিমি। এমন অমানবিক উপাচার্য আমরা চাই না।” উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, আগামীকাল (বুধবার) দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তার বাসভবনের বিদ্যুৎ ও সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল রাখার জন্য শুরু থেকেই একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। যতবারই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়, ততবারই নতুন করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়।
সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে পুরো বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে। তবুও ‘একদফা’ দাবির কথা বলা হচ্ছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে করানো হচ্ছে, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনরত ৩৫ জন শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানে, এই ৩৫ জন কারা। আমার বিশ্বাস, শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে কোনটি যৌক্তিক এবং কোনটি অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অন্যায় হয়ে এসেছে, যার প্রেক্ষিতেই পরিস্থিতি আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে।” উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই দাবিগুলো আমলে না নেওয়ায় আন্দোলন ক্রমে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয় এমনটাই দাবি শিক্ষার্থীদের।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।