মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চাটমোহরে নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করলো গ্রামবাসী

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: বিলে চাষাবাদ ও সেখান থেকে ফসল বাড়িতে নেওয়ার একটিমাত্র রাস্তা। বছরের পর বছর সে কাঁচা রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতে কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। ভোগান্তির শেষ থাকে না কৃষকদের।

একটি সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েও লাভ হয়নি। অগত্যা বাধ্য হয়ে নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি ইট বালি ফেলে রাস্তা নির্মাণ করলেন গ্রামবাসী। পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌরনগর-বিন্যাবাড়ি গ্রাম সংলগ্ন মাদারি ফকিরের বাড়ি থেকে ছয় আনির বিল অভিমুখে রাস্তাটি শনিবার (৩১ ম) থেকে নির্মাণকাজ শুরু করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘের কাঁচা রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। বিলে চাষাবাদে যাতায়াত ও ফসল আনা-নেয়ার জন্য এটি একমাত্র রাস্তা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে রাস্তাটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। বৃষ্টি হলেও কাদা পানিতে চলাচল দায় হয়ে যায়। গরু-মহিষের গাড়ি ফসল নিয়ে বিল থেকে আসতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নিজেদের প্রয়োজনে ইট-বালি ফেলে রাস্তাটি নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাদুল হক বলেন, ছয় আনির বিলে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চাষাবাদ করেন। এই ফসলই এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু বিলে যাতায়াতে কৃষকের ভোগান্তির শেষ নেই, অবহেলিত। গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না।

অনেকে আহত হয়েছে। রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে আমরা স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কাজ হয়নি। তাই আমরা গ্রামবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করছি। ৮ নম্বর ওয়ার্ড এর সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের এই মাঠে প্রচুর ফসল জন্মে। এখানে অনেক জমি আছে। কিন্তু মাঠের ফসল আমরা ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারি না। গরু-মহিষের গাড়ি কন আর ভ্যান গাড়ি কন, কোনো গাড়ি এখান দিয়ে যাতায়াত করতে পারে না। বিল থেকে মুল সড়কে উঠতে পারে না।

কাদার মধ্যে হাবুডুবু খায়। ফসল নষ্ট হয়। এই কারণে আমরা নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটা নির্মাণ করলাম। স্থানীয় কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের এই সড়কটা খুব খারাপ। কৃষকরা বিল থেকে ধান কেটে গাড়িতে আনার সময় বিপদে পড়ে। কাদা পানিতে গাড়ি নষ্ট হয়। আবার নিচু বিলের রাস্তা থেকে উঁচু মুল সড়কে উঠাতে পারে না। আশপাশের মানুষ ডেকে এনে সবাই মিলে গাড়ি ঠেলে উপরে তুলতে হয়।

এ সময় কেউ বা আহত হয়। এইরকম কষ্ট হয়। দেখলাম যখন কোনো জায়গা থেকে কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না, তখন গ্রামের মানুষ সবাই পরামর্শ করে নিজেরাই টাকা দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করছি। স্থানীয় বিআরডিবির গ্রুপ ম্যানেজার শাহীন আলম বলেন, এই ছয় আনির বিলে সরকারি বিআরডিবির অনুমোদিত পাঁচটি গভীর নলকূপ আছে। এছাড়া প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমি আছে।

বিলের সমস্ত ফসল কৃষকরা এই একটা রাস্তা দিয়েই উত্তোলন করেন। কিন্তু দু:খের বিষয় প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে রাস্তাটি অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বার গেছেন তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের সবাই চাঁদা তুলে, অনেকের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এলাকাবাসীর প্রচেষ্টা বা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমি রাস্তাটি সরেজমিন গিয়ে দেখবো। সেখানে একটি সাবমারসিবল সড়ক করতে কেমন কি লাগবে সেটি যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এলাকাবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়