কমছে না বৃষ্টি, পাহাড়ধসের আতঙ্কে পার্বত্যবাসী


বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র উদ্বেগ ও আতঙ্ক। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
নিম্নচাপের প্রভাবে বান্দরবানে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। ঝোড়ো বাতাসের কারণে গাছ উপড়ে পড়ে আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে মেনরত ম্রো নামে একজন এবং বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বিছামারায় নূর ফয়েজ নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।টানা বৃষ্টির ফলে পাহাড় ও সড়ক ধসের কারণে লামা-সুয়ালক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মাটির ধ্বংসাবশেষ সড়কে পড়ে থাকায় রুমা ও থানচি সড়কে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলেও টানা বৃষ্টির কারণে পশুর হাট এখনও বসেনি। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা ও খামারিরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এছাড়া পাহাড় ধসের পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বহু এলাকায়। ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আতঙ্কে আছি।
একদিকে পাহাড় ধস, অন্যদিকে নদীর পানি বেড়ে বন্যার সম্ভাবনা। কালাঘাটা এলাকার ব্যবসায়ী সুলাল বড়ুয়া বলেন, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো, বুঝে উঠতে পারছি না। আলীকদম সদরের বাসিন্দা সুশান্ত তংচঙ্গ্যা জানান, গত চারদিন ধরে আলীকদম উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই।
নেটওয়ার্কও বন্ধ। জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদরে রয়েছে ৪৬টি, রুমায় ২৮টি, রোয়াংছড়িতে ১৯টি, থানচিতে ১৫টি, লামায় ৫৫টি, আলীকদমে ১৫টি এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪২টি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত ২৯ মে থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (১ জুন বিকেল ৩টা পর্যন্ত) ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার আহ্বানে মাইকিং করছে পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আসিফ রায়হান জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সাত উপজেলায় ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়নি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আরা রিনি বলেন, জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়কে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার ও নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।