ভূঞাপুর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত
আখতার হোসেন খান, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৫০ শয্যার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ডাক্তার সংকট প্রকট।ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০ জন হলেও বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭০ জন রোগী। এর বাইরেও অপেক্ষায় রয়েছেন আরও ২০-২৫ জন। ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভূঞাপুর ৫০ শয্যা হাসপাতালটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে যমুনার চরচঞ্চলের হতদরিদ্র রোগীরা এখানে আসে। এছাড়াও ভূঞাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী কালিহাতি, গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলা রোগীর এখানে এসে সেবা নিয়ে থাকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে প্রবেশ করেই ২য় তলায় বারান্দায় রোগীরা শুয়ে রয়েছে। হাসপাতালের ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের ভেতরে। শিশুর বিছানায় পানি পড়ায় অনেকে শুয়ে থাকতে পারছেন না অনেকে দাঁড়িয়ে অথবা বিছানার এক পাশে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
মেঝে ভেজা ও স্যাতস্যাতে হয়ে থাকায় পুরো ওয়ার্ডজুড়ে এক ধরনের দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। শিশু ওয়ার্ডে ৬টি বৈদ্যুতিক ফ্যান থাকলেও চলছে মাত্র একটি। তীব্র গরমে শিশু রোগীরা কষ্টে ভুগছে। বৈদ্যুতিক সুইজ চাপ দিলেই আগুন ধরে যায় সুইজটির ভেতরে। বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে হাত পাখা কিনে রোগীকে বাতাস দিচ্ছে। পুরুষ ওয়ার্ডে মোট চারটি টয়লেটের মধ্যে দুইটি দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে।
অবশিষ্ট দুইটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে প্রতিদিন রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জানা যায়, সরকারি বিধিমতে এই হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১২ জন। সবচেয়ে জরুরি বিভাগগুলো- গাইনী, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, চক্ষু এবং অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে চিকিৎসক নেই। এতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। ফলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের ক্লিনিক গুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা ১২ জন, কিন্তু বাস্তবে আছেন মাত্র ১ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা ১২ জন হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। যার ফলে হাসপাতালের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। এদিকে, প্রায় দুই বছর ধরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কোনো অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। ফলে অপারেশন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য কিটও নেই এ হাসপাতালটিতে। ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় অনেক সময় গ্যাস দেয়ার প্রয়োজন হলেও ওয়ার্ডে থাকা একমাত্র গ্যাসের মেশিনটিও নষ্ট হয়ে রয়েছ। স্থানীয়দের দাবি হাসপাতালটি ৫০ শয্য থেকে ১০০ শয্যয় বৃদ্ধি করা।
সেই সাথে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং ডাক্তার অতিব জরুরী। স্থানীয় মমিনা বেগম নামের এক ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালে আসছিলাম আমার ছেলেকে নিয়ে নেবুলাইজার মেশিন বিকল থাকার কারণে আমাকে টাঙ্গাইল রেফার্ড করেছে। ঠান্ডু ভূইয়া নামের এক রোগী জানান, দুই দিন যাবৎ হাসপাতালে ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দুই একটা ওষুধ ছাড়া বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
এছাড়া শ্বাসকষ্টের রোগীদের যে মেশিনের মাধ্যমে গ্যাস দেয়া হয় সেটি নষ্ট থাকার কারনে বাইরে থেকে কিনে এনেছি। বর্তমানে হাসপাতালের সেবার মান খুবই খারাপ। যমুনার চরাঞ্চলের মেগার পটল থেকে আসা আব্দুস সালাম বলেন, তিনদিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি আছি। আমার শ্বাসকষ্ট। প্রতিদিন ১ বার করে ডাক্তার আসে। আমাকে গ্যাস দেয়ার কথা কিন্তু পাইতাছিনা। ঐটা দিতে পারলে আমি সুস্থ হইতাম।
কিন্তু তিনদিনেও আমি পাইনাই। এখন শুনতাছি মেশিন নষ্ট। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সোবহান বলেন, আমি বার বার সমস্যার সমাধান চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছি। তারা কোন কর্ণপাত করছেন না।
এছাড়া পৌরসভায় প্রতিবছর আমরা ১০ লাখ টাকা করে টেক্স দেই। কিন্তু ময়লা আর্বজনায় ড্রেনগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানিতে জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং ব্যাপক মশার উপদ্রব হচ্ছে। পৌর সভা তা পরিষ্কার করে না।



সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।