
আলমগীর কবির, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় সাইফুল সর্দার ওরফে সাইফেল (৪৯) নামে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল সর্দার ওই গ্রামের হবি সর্দারের ছেলে। তিনি আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং পেশায় একজন কৃষক। এ ঘটনায় ইসমাইল মোল্যা (৩০) নামে আরও এক কৃষক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তার অবস্থা ও আশংকা জনক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সরপেশ ও জুয়েল মিয়া গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার ভোররাতে জুয়েল মিয়া গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মেম্বার শরিফুল ইসলাম গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রথমে পুলিশ পরিচয়ে সাইফুল সর্দারের ঘরে প্রবেশ করে। পরে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ইসমাইল মোল্যার বাড়িতে গিয়ে তাকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এরপর হামলাকারীরা ওই এলাকার লালচান শরীফ, লেলিন শরীফ, দিদারুল আলম কচি ও শিমুল মোল্যাসহ অন্তত ৭-৮টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্বজনরা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাইফুল সর্দারের মৃত্যু হয়। বর্তমানে আহত ইসমাইল মোল্যা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত সাইফুল সর্দারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠ বলেন, গভীর রাতে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় আমরা দরজা খুলে দেই। ঘরে ঢুকেই জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে তারা আমার স্বামীকে কোপাতে থাকে। খুনিরা আমাদের ঘর তছনছ করে সব লুটে নিয়ে গেছে।
আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আহত ইসমাইল মোল্যার বোন মর্জিনা আক্তার জানান, হামলাকারীরা টিনের বেড়া ভেঙে ঘরে ঢুকে তার ভাইকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। এদিকে খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) আজম খান ও আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ আইয়ুব মিয়া (৫৫) ও শফিকুল মিয়া (৩৮) নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার আজম খান জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ওসি আবুল হাসনাত খান বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অন্যান্যদের কে গ্রেফতারে ঘটনা স্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.