
সংবাদের আলো ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরে প্রধান শিক্ষক কতৃক ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। অভিযুক্ত উত্তম কুমার দাস সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঘটনা জানাজানির পর থেকে প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি ও কু-প্রস্তাবের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অভিযুক্ত শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
খবর পেয়ে দাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস তাদেরকে একাকী তার রুমে, ছাদের উপর এবং মেয়েদের ওয়াশরুমে ডেকে নেন, বিভিন্ন অজুহাতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাতদিয়ে স্পর্শ করেন। এ ছাড়াও তিনি অসচ্ছল ছাত্রীদের পরিক্ষার ফি-বেতন মওকুফের প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ করেন। এ সব বিষয়ে মুখ খুললে বা কাওকে বললে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়াসহ ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেন।
গত শনিবার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রী ওয়াশরুমে গেলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস ওয়াশরুমে ঢুকে ওই শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করেন। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন ছাত্রী বিষয়টি দেখে ফেললে ঐ শিক্ষক তাকে ছেড়ে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয় এবং এলাকায় চাঞ্চল্য ও ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘একজন শিক্ষক মা-বাবার সমান। মা-বাবার পরেই শিক্ষক। সেখানে তিনি একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে কিভাবে এমন কাজ করতে পারেন, এর আগেও আমার মেয়ে কয়েকবার এমন অভিযোগ করেছে, একদিন তিনি আমার মেয়েকে ৫০ টাকা দেন, বাড়িতে আসার পর আমি জিজ্ঞেস করলে সে বলে স্যার দিয়েছেন কিছু খাওয়ার জন্য, স্যারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরেরদিন সে স্কুলে গেলে স্যার তাকে ডেকে কু-প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে মান-সন্মানের কথা বিবেচনা করে আমরা তার বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেই। প্রায় দুই মাস পর আবারও সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা শুরু করে, গতকালকে মেয়েকে ওয়াশরুমে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘ওনার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ ইতোপূর্বে অনেকবার পেয়েছি। যেহেতু তিনি প্রধান শিক্ষক, তাই উপযুক্ত প্রমানাদি না থাকায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। শনিবারের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে জানানোর পর আমরা কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি কতৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট, আমি দশ বছর এখানে শিক্ষকতা করি, এলাকার কিছু লোক ও বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক মিলে আমার বিরুদ্ধে একটি চক্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন, মেয়েদেরকে এগুলো মুখস্থ করিয়ে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়েছেন। আমার অপরাধ হচ্ছে আমি একদিকে হিন্দু, অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থি। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি, বিদ্যালয় থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তার প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.