লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেনের প্রতি অনাস্থার প্রস্তাবসহ আবেদন করেছেন সকল সদস্য।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন একক সিদ্ধান্তে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করেন। বিধিমত সদস্যদের নিয়ে সভা ও রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহনের নিয়ম থাকলেও ফরহাদ হোসেন চেয়ারম্যান সরকারী বিধি মানতে নারাজ। ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন ছাড়াই উপজেলা কমিটি বরাবরে প্রকল্প উপস্থাপন করে বরাদ্ধ নিয়ে নিজেই বাস্তবায়ন করেন। এসব প্রকল্প নাম মাত্র কাজ করে আত্নসাৎ করেছেন লাখ লাখ টাকা। ত্রাণসহ বিভিন্ন সরকারী অনুদান প্রদানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের অর্থ আত্নসাৎ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে ১৫/২০টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা ও সুফলভোগিরা। সকল অভিযোগ তদন্তনাধিন রয়েছে।
শৈলমারী চরের জহির রায়হান বলেন, আমাদের বিদাালয় মাঠে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হলেও এক ফোটা মাটিও ফেলে নি চেয়ারম্যান। এজন্য ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ভিজিডি কার্ড বিতরনেও নানান অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। কার্ড পরিষদে বিতরন করার কথা থাকলেও তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিতরন করেন। সেখানে সুফল ভোগিদের কার্ড দিতে গড়িমসি করায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিউলি প্রতিবাদ করেন। যার কারনে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিউলিকে মারপিট করে লাঞ্চিত করেন। যার বিচার দাবি করে ওই নারীও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এতেই শেষ নয়, চলতি অর্থ বছরে টিআর কাবিখা প্রকল্প গ্রহনের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় সভা আহবান করে ১৫ সেপ্টেম্বর নোটিশ জারি করেন চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন। সেই সভার আগেই ১৫ সেপ্টেম্বর ১৪ লাখ ৬০ হাজার ২৩৪ টাকা, ১০.৫০ মেঃটন চাল ও ১০.৫০০ মেঃটন গম বরাদ্ধের প্রকল্প গোপনে রেজুলেশন ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাঠান। নোটিশ মত ২১ সেপ্টেম্বর সদস্যরা সভায় বসলে চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প গ্রহনের কথা বললে বিতর্ক বাঁধে। এতে চেয়ারম্যান সকল সদস্যকে গালমন্দ ও লোকজন দিয়ে হেনস্থা করে পরিষদ থেকে বেড় করে দেন।
পরবর্তিতে সদস্যরা জানতে পারেন সভার আগেই প্রকল্প পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সদস্যরা বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেন বিচার প্রার্থনা করেন। এতেও কোন কাজ না হওয়ায় সদস্যরা চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেনের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব তুলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। পরিষদের সকল সদস্যই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিউলি বেগম বলেন, ভিজিডি কার্ড আটকিয়ে টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান। এর প্রতিবাদ করায় নিজ বাড়িতে সকলের সামনে আমাকে মারপিট ও লাঞ্চিত করেছেন। একক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় সভা চলা অবস্থায় সকল সদস্যকে নোংরা ভাষায় গালমন্দ করে পরিষদ থেকে বেড় করে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। তার প্রতি আমরা সকলে অনাস্থা এনেছি।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুব সরোয়ার বলেন, সভার আগে প্রকল্প উপস্থাপনের বিষয়টি আমার অজানা এবং চলতি অর্থ বছরের টিআর কাবিখা(প্রথম কিস্তির) রেজুলেশন এখন পর্যন্ত করা হয়নি। চেয়ারম্যান একাই সভার নোটিশ করেছেন ও প্রকল্প পাঠিয়েছেন।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, সদস্যরা স্বাক্ষর না করলে তো উন্নয়ন থেমে থাকবে না। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। সকল প্রকল্প দেখে অর্থ ছাড় দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একটি গ্রুপের উস্কানিতে সদস্যরা অনাস্থা এনেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। সকল অভিযোগ তদন্ত চলছে। একই সাথে অনাস্থার বিষয়টি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.