সংবাদের আলো ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে উপেক্ষা করে গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। শনিবারের (৪ অক্টোবর) দিনব্যাপী হামলায় অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সূত্র ও চিকিৎসকরা।
এর আগে শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি জানান, বন্দি মুক্তির প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে হামাস এবং তিনি বিশ্বাস করেন, “তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।” তবে ট্রাম্পের সেই আহ্বান উপেক্ষা করেই ইসরায়েলি বাহিনী পুরো গাজা উপত্যকাজুড়ে নতুন করে হামলা চালায়।
এদিকে উত্তর গাজায় ভয়াবহ হামলা চলমান। এসময় গাজা সিটির আল-তুফাহ এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং অনেকে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েন। একই জায়গায় একটি আবাসিক এলাকায় হামলায় সাত শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়।
এছাড়া আল-ইয়ারমুক সড়কের একটি বাড়িতে হামলায় একজন নিহত হন এবং আল-লাব্বাবিদ এলাকায় বেসামরিক লোকদের একটি সমাবেশে হামলায় একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। গাজা সিটির বিভিন্ন স্থানে আরও ১৪ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান বলে খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া গাজা সিটির সাবরা, তেল আল-হাওয়া, রিমাল, নাসর ও বিচ ক্যাম্প এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা রিমোট কন্ট্রোল ও বুবি ট্র্যাপড রোবট ব্যবহার করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আল-জালা সড়ক ও নাসর এলাকা থেকে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো সামান্য পিছিয়ে গেলেও আকাশে ড্রোন ও স্থলবাহিনীর মাধ্যমে এলাকাটিতে নজরদাড়ি ও নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুধু উত্তর গাজায় না, মধ্য ও দক্ষিণ গাজায়ও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-ইশরিন সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় এক কিশোরী নিহত হয়েছে। এছাড়া হামলায় আহত হয় আরও কয়েকজন। মধ্য গাজার অন্য এলাকাতেও একটি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে প্রাণ গেছে আটজনের।
নাসের হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হামলার পর আরও ১১ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানগুলো এলোমেলোভাবে শহরের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে গুলি চালায়। উত্তরের খান ইউনিসেও নতুন করে গোলাবর্ষণ চালানো হয়।
অভিযান বন্ধের নির্দেশ, তবুও হামলা
ইসরায়েলি সামরিক রেডিও ও সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন জানায়, গাজা সিটিতে দখল অভিযান বন্ধের রাজনৈতিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং সামরিক কর্মকাণ্ডকে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে সীমিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্পের বন্দিমুক্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি দৈনিক মারিভ জানিয়েছে, নেতানিয়াহু গভীর রাতে জরুরি বৈঠকে মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে এই বৈঠকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ তারা যুদ্ধ থামানোর বিপক্ষে।
অন্যদিকে, সামরিক রেডিওতে দখল অভিযান স্থগিতের ঘোষণা সত্ত্বেও গাজা সিটির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার চাপ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা সতর্ক করে বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চল এখনও “অত্যন্ত বিপজ্জনক যুদ্ধ এলাকা” এবং সেখানে অবস্থান করা “জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।”
গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ক্রমাগত বোমাবর্ষণে গাজা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। খাদ্য সংকট ও রোগব্যাধি মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে উপত্যকাজুড়ে।
সূত্র: আনাদোলু, আল জাজিরা
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.