ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী, টংক আন্দোলনের মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের মুক্তি সংগ্রাম এবং সমাজতন্ত্রের মহান নেতা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি, আজীবন বিপ্লবী, কমরেড মণি সিংহ এর ২৮ জুলাই ২০২৫ সোমবার ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী।
কমরেড মণি সিংহ ছিলেন একজন সত্যিকারের বিপ্লবী, যিনি সারা জীবন গরিব-দুঃখী, কৃষক-শ্রমিক মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, ছিলেন আদর্শ, সততা আর ত্যাগের এক জীবন্ত প্রতীক। তাঁর মতো নেতা আজকের বাংলাদেশেও খুব দরকার, কারণ আমরা আজও ন্যায্যতা, শোষণমুক্ত সমাজ এবং সৎ নেতৃত্বের সংকটে ভুগছি।
কমরেড মণি সিংহ ১৯০১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন, পরে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিবাদী। ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরে কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শোষিত মানুষের শক্তিই পারে সমাজ বদলাতে।
তিনি রুশ বিপ্লব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শ গ্রহণ করেন। শুধু আদর্শে বিশ্বাস করেননি, বাস্তবেও তা মেনে চলেছেন। তিনি টংক প্রথার মতো শোষণের বিরুদ্ধে গরিব কৃষক ও আদিবাসীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন, যার কারণে অনেকবার জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু কোনোদিনই ভয় পাননি, মাথা নত করেননি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জেল থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সঙ্গে কাজ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। স্বাধীনতা অর্জনের পরও তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে।
আজকের বাংলাদেশে যখন দুর্নীতি, দলীয় স্বার্থ, হিংসা ও বিভাজনের রাজনীতি বেড়ে গেছে, তখন মণি সিংহের মতো একজন আদর্শবান নেতার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অনুভব করা যায়। তিনি দেখিয়ে গেছেন কিভাবে নিজ স্বার্থ ভুলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। তাঁর মতো নেতারা থাকলে সমাজে ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলা ও মানবিকতা ফিরে আসতে পারে।
মণি সিংহ আমাদের শিখিয়েছেন – রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়, রাজনীতি মানে মানুষের পাশে থাকা, শোষণ থেকে মুক্তি, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে আত্মত্যাগ, আদর্শ ও সাহসিকতা দিয়ে একটি জাতিকে বদলে দেওয়া যায়।
১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহ বার্ধক্য জনিত কারণে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান। তিনি চলে গেলেও তাঁর আদর্শ আজও বেঁচে আছে। আজকের প্রজন্ম ও রাজনৈতিক নেতাদের উচিত তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হয় আরও ন্যায্য, মানবিক ও গণতান্ত্রিক।
বিপ্লবী কমরেড মণি সিংহের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখকঃ মোরশেদ আলম
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি,
নেত্রকোণা জেলা কমিটি।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.