ভেড়ামারা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত মাসের ১০ই এপ্রিল উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর, হাটখোলাপাড়া ও ভুরকাপাড়া গ্রামে এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। স্থানীয়দের দাবি,মূলত অবৈধভাবে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলেই এই ভাঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে। ২৮ দিনে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হলেও কর্তৃপক্ষ নেয়নি যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা। ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রায়টা-মহিষকুন্ডি নদীরক্ষা বেরিবাঁধ।স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ,তাদের অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিশেষ মহল এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত।
এদিকে শুষ্ক মৌসুমের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙ্গনে হুমকিতে রয়েছে এলাকার বসতবাড়ি, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাউবো'র রাইটা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাঁধ। স্থানীয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ১০ই এপ্রিল থেকে ভাঙ্গনের সূত্রপাত। বিগত ২৮ দিন ধরে এই অঞ্চলের আবাদি প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দেয় না।শুষ্ক মৌসুমের এই ভাঙ্গনে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। বর্তমানে নদীর এই অংশে ভাঙ্গন কবলিত স্থান থেকে নদী রক্ষা বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৬০ মিটার।কিছু জায়গায় আরো কম।
এই অঞ্চলের বসতবাড়ি থেকেও নদীর দূরত্ব মাত্র ১০০ গজ। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসীদের উদ্বেগের আরেকটি কারণ হল, যদি কোন কারনে এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বর্ষা মৌসুমে পুরো কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা আছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর অসম্মতি সত্ত্বেও রাইটা-ফয়জুল্লাহপুর ঘাটে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এই বালু তোলার ফলেই এখানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।এর আগেও নদী ভাঙ্গনের ফলে এই অঞ্চলে শতশত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে ব্যবস্থা নিলেও অদৃশ্য কারণে তা আবার চালু হয়ে যায়। এছাড়াও এবারের ভাঙ্গনের ২৮ দিন পেরিয়ে গেল প্রশাসন উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইবাদত আলী জানান, তার মোট ৭বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা এলাকা শেষ হয়ে যাবে।তখন লাখো মানুষকে ঘরছাড়া হতে হবে। মূলত এই অঞ্চলে পদ্মা নদীতে বালু তোলার কারণেই এমনটি হয়েছে।এই বালু তোলার সাথে জড়িত রয়েছে জাম্মদ মেম্বার,রাকিব, জিয়ারুল,ইদ্রিস মেম্বার, সনি কবিরাজ,শিলন,শামীম,রুবেল। ফয়জুল্লাপুরের বাসিন্দা নাদের মন্ডল জানান,মূলত পদ্মা নদীতে ব্যাপক আকারে বালু তোলার কারণেই এই এলাকা ভাঙছে। তবে কিছুদিন ধরে বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত হাটখোলা পাড়ার হরযত আলি বলেন, নদী যেখানে ভাঙছে সেই অঞ্চলে বালু ব্যবসায়ীরা পাহাড়ের সমান উঁচু করে বালু রাখে।কার্গোতে করে যতটুকু বালু আনে তার দ্বিগুণ পরিমাণ পানি আসে।
মূলত এটাই ভাঙ্গনের মূল কারণ। তবে জান মোহাম্মদকে (জাম্মদ মেম্বার) বালু তোলার সাথে সম্পৃক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মূলত প্রশাসনের থেকে ইজারা নিয়েই বালু তুলেছি। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বালু তোলা সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না তাই আমরা বালু তুলছি না। তবে উত্তোলিত যে বালুগুলো নদীর পাশে আছে, সেগুলো আমরা বিক্রি করছি। জুনিয়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান জানান,গত প্রায় ২৮ দিন ধরে ফয়জুল্লাহপুর নদী রক্ষা বাঁধের পাশে বেশ কিছু জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।নদী তীরবর্তী এলাকা রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী। ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান,১৩ই এপ্রিলের পর জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চলের কোন ঘাটে নতুন করে আর ইজারা দেয়া হয়নি। আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি অবগত করেছি।
এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেছেন,নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। বালু উত্তোলনের ফলেই সাধারণত নদীর তীরবর্তী এলাকা ও নদী রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাঙ্গনকৃত এলাকার পাশেই পাহাড়সম কয়েকটি বালু বিক্রয়ের স্তুপ থাকায় নদীভাঙ্গন কবলিত স্থানে কাজ করতে পারছি না। আমরা প্রশাসনকে বলেছি দ্রুত বালু সরানোর জন্য।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.