মোঃখাইরুল ইসলাম ,কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসে অধিকাংশ সময় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী'দের। ডাক্তার সংকট থাকায় সঠিক সময়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনরা এতে বিভিন্ন ক্লিনিক/ হাসপাতালে সেবার জন্য যেতে হচ্ছে তাদের। প্রতিদিন এই হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ চিকিৎসা প্রদানে সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন ডাক্তার। নির্ধারিত ১১টি ডাক্তার পদের বিপরীতে এই অপ্রতুল সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চলছে টানাপোড়েনের সেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। কেউ এসেছেন সর্দি-জ্বর নিয়ে, কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। রোগীদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের, যারা ভরসা করেন এই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ওপর। অধিকাংশ মানুষ অভিযোগ করেন, কাঙ্ক্ষিত সেবা তারা পাচ্ছেন না। আছিয়া খাতুন নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, আগে এই হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলাদের সিজার করত গরীব মানুষের অনেক উপকার হতো এখন বন্ধ তাই অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে অন্য হাসপাতালে টাকা দিয়ে সিজার করলাম। এখানে সিজার হলে তো আমাদের এতো গুলো টাকা লাগতো না। তারাতাড়ি সরকার সিজার টা চালু করুক গরীব মানুষের অনেক উপকার হবে।
আনোয়ার হোসেন নামে আরও এক ভুক্তভোগী বলেন, এই হাসপাতালে তেমন কোন ডাক্তার নেই সঠিক সময়ে কোন চিকিৎসা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো হাসপাতালে অপারেশনের যন্ত্রপাতির থাকা স্বত্বে সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসছে না। এই গুলো দেখার ও কেউ নেই।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, আমি আমার এক সমস্যা নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম ডাক্তার মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়। কিন্তু নার্সদের আচার-আচরণ তেমন ভালো না তাদের কিছু জিজ্ঞাসা করলে হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে যায় কারণ তাদের বেশি ভাগ বাড়ি এলাকায় তাই জন্য এমন করে। রোগীদের সাথে নার্সরা ভালো ব্যবহার করলে রোগী অনেক টায় সুস্থ হয়ে যাবে। নার্সদের আচরণ ভালো করতে হবে আমি তাদের বড় অফিসারের কাছে বলতে চাই নার্সের বিষয় গুলো যেন দেখে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এখানে কনসালটেন্ট (গাইনী, শিশু, সার্জারি), মেডিসিন অফিসার, জুনিয়র ডাক্তার, এবং এনেস্থেসিয়োলজিস্টসহ মোট ১১টি পদ থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র তিনজন। আগামী জুন মাসে আরও দুইজন মেডিকেল অফিসার বদলি হয়ে যাবেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর বেশ কয়েকটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। বর্তমানে কর্মরতরা ডিসেম্বর মাসে অনেকেই অবসরে যাবেন। অন্যদিকে কর্মরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনজন ডাক্তার দিয়ে দিনে শতাধিক রোগী সামলানো খুব কষ্টকর।
ইনডোর, আউটডোর, জরুরি সব সামলাতে হয়। কখনো কখনো একটানা ১২ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। তিনি আরও জানান, অনেক সময় রোগীদের অপারেশন বা জরুরি চিকিৎসা দিতে গেলে প্রয়োজনীয় এনেস্থেসিয়োলজিস্ট না থাকায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে রোগীর ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি চিকিৎসকদের মনোবলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কামারখন্দ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ড.মো, মমিন উদ্দিন বলেন, তিনজন ডাক্তারের জন্য এতো রোগী চিকিৎসা দেওয়া অনেক কষ্টকর, এই সমস্যা শুধু এখানে না সারা বাংলাদেশে একই অবস্থা। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমস্যা গুলো জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.