রাজেশ গৌড়, দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি: তাদের শ্রমে নগর, সভ্যতা গড়ে উঠলেও ভাগ্যের চাকা ঘুরেনা নেত্রকোনার দুর্গাপুরের ফাতেমাদের। সংসারের হাল ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ফাতেমার মত অনেক নারী শ্রমিকরা দালান,সেতু,রাস্তার কাজে ব্যবহৃত ভাঙ্গা ইটের টুকরো তৈরীর কাজ করে চলেছেন। দুর্গাপুরের পৌর শহরের দেশওয়ালী পাড়া এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন জায়গায় ১০ থেকে ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ইট ভাঙার কাজ করে আসছেন শতাধিক নারী। এদের মধ্যে কারও স্বামী নেই,কারও স্বামী অসুস্থ। কেউ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে, কেউ দিনমজুর স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টায় ইট ভাঙার কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে হাতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙে খোয়া তৈরির কাজ । প্রতি বস্তুায় পারিশ্রমিক ১৫ টাকা। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ইনকাম করতে পারেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা৷ খোয়া ভাঙতে প্রায় দিনই হাতুড়ি কিংবা ইটের আঘাত পান হাতে বা পায়ে ।
এরপরও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে তারা অব্যাহত লড়াই-সংগ্রাম করে যান। স্থানীয়রা এখান থেকে স্বল্প মূল্যে খোয়া কিনে নিয়ে প্লাস্টার, ঢালাইসহ নানা কাজে ব্যবহার করেন। দুর্গাপুর পৌর শহরের বালিকান্দি গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী ফাতেমা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। ছেলের মানসিক সমস্যা থাকায় ছেলের বউ নাতীদের আমার খাওয়াতে হয়। এজন্য বুড়া বয়সে চোখে কম দেখি তারপরও বাধ্য হয়ে ইট ভাঙ্গার কাজ করছি। বুরুঙ্গা গ্রামের নারী শ্রমিক জহুরা বেগম বলেন, আমার স্বামী দূর্ঘটনায় হাত ভেঙ্গে গেছে কাজ করতে পারে না। আমি ইট ভেঙ্গে স্বামীর ওষুধের খরচ সহ সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন ১৫০ -২০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। এটা দিয়ে কষ্ট করে চলি।
একই গ্রামের জাহানারা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। ছেলেরা তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খায়। এজন্য ১০ বছর যাবত ইট ভাঙ্গার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি চকলেংগুরা গ্রামের আরতি রবিদাস বলেন, স্বামীর উপার্জনের টাকায় সংসার চলে না। তাই সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সহ নিজের খরচ যোগাতে ইট ভাঙ্গার কাজ করছি দীর্ঘদিন যাবত । দেশওয়ালী পাড়া এলাকার ইট ভাঙা সুরকি ব্যবসায়ী জানান, আমার এখানে ১৩ জন নারী শ্রমিক কাজ করছে। তাঁরা প্রতিদিন ১৫০ -২০০ টাকা ইনকাম করতে পারে৷ আমি এসব ইটের খোয়া স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে নিজের সংসার চালাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, নারী শ্রমিকরা যদি বৈষম্যের শিকার হই তাহলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। শ্রমিকদের জন্য সরকারী সহযোগিতা আসলে এসব নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.