এএস সফিক, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ): আর কয়েকদিন পরেই চৈত্র মাস শেষ হচ্ছে। বর্ষবরণের ১ম দিন থেকেই মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসবে। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখের উপলক্ষে বিভিন্ন প্রথাগত আয়োজন থাকে। এ বছর পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে বিশেষভাবে চোখে পড়েছে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা। মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করতে গিয়ে মৃৎ শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই বছর সাটুরিয়া উপজেলায় মৃৎ শিল্পের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। কবুতর, হাড়ি, বাটি, মাছের মূর্তি, মাটির ব্যাংক, বাঙালি ঐতিহ্যবাহী মাটির গয়না, অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী মাটির সামগ্রীগুলি তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন চলছে শেষ সময়ের কাজ। কেউ পুড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ রং, কোন বাড়িতে এখনও কাঁচা মাটির নিপুণ খেলা চলছে। সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের খলিলাবদ গ্রামের বিশ^ নাথ পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মাটির দিয়ে কবুতর বানাচ্ছেন। আক্ষেপের সুরে বলেন, প্লাষ্টিক ও সিলভার এসে আমাদের ব্যবসা শেষ করে দিয়েছে। এখনকার ছেলে মেয়েরা মাটির জিনিসের সাথে এত পরিচিত নয়। সবাই প্লাষ্টিকের খেলনা কিনতে চায়। ফলে আমাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। আগে আমার গ্রামে শতাধিক পাল সরাসরি এ মৃৎ পেসার সাথে জড়িত ছিল । আর এখন মাত্র ৩ টি বাড়ির লোকজন এ মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছি। বাপ -দাদার পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছি। তবে বৈশাখী মেলার কারণে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে মৃৎ শিল্পি সন্তোষ বলেন, আগে সারা বছর মেলা হত। এখন মেলা কমে গেছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমরা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। পূজা পার্বনে ঠাকুর না মানালে এ পেশায় থাকতে পারতাম না। একদিকে মাটির খেলনা দাম কম, অপরদিকে এর কাঁচা মাটির দাম বেড়ে গেছে। তাই এখন লাভও কম হচ্ছে। তবে এ বৈশাখী মেলায় ঝড় বৃষ্টি না হলে একটু কেনা-বেচা বাড়লে আমাদের বাড়তি টাকা পয়সা রোজগার হবে বলে দাবী এ মৃৎ শিল্পির। এই প্রসঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার প্রচীন মৃৎ শিল্পী ভবেষ পাল বলেন, পহেলা বৈশাখের আগমনে স্থানীয়দের মধ্যে মাটির তৈরি সামগ্রীগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময়েই আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। তবে এতে আমাদের দারুণ আনন্দও হয়। মৃৎ শিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারছি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেলাতে কসমেটিক দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে যে খাজনা ধরে, মেলা কমিটি আমাদেরও সমপরিমাণ খাজনা ধরে। এতে আমাদের লাভ কম হয়। তাই আমরা আশা করব প্রশাসন এ খাজনার বিষয়টি বিবেচনা করলে আমরা টিকে থাকতে পারব। শুধু সাটুরিয়াতেই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃৎ শিল্পীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নিজেদের তৈরি সামগ্রী বাজারে বিক্রি করছেন। তবে এ বছর সাটুরিয়া উপজেলায় মৃৎ শিল্পের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের খলিলাবাদ, সাটুরিয়া, ধানকোড়া এবং তিল্লি গ্রামে বেশী মৃৎ শিল্পি পরিবার রয়েছে। তাছাড়া বাকী ৫ টি ইউনিয়নে কম বেশী পরিবার রয়েছে। সব মিলিয়ে শতাধিক পরিবার এখনও মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত। বর্ষবরণ উপলক্ষে তাদের কাজ বেড়ে গেছে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তারা নিকট লিখিত আবেদন করলে, তাদের সরকারী ভাবে সকল সুযোগ সুবিদা দেওয়া হবে। আর মেলাতে তাদের যেন খাজনা নাম মাত্র নেয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.