ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় ভূঞাপুরে দোকানে হামলা


সংবাদের আলো ডেস্ক: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রির অপরাধে মামা গিফট কর্ণার ও ফুল বিতান নামের একটি দোকানে হামলা করেছে তৌহিদী জনতা। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভূঞাপুর থানা মার্কেটের বিপরীত পাশে স্কুল মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। জানাযায়, বৃহস্পতিবার উপজেলার পৌরশহরের বিভিন্ন ফুডকর্ণার ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বেহায়াপনা বা যে কোন ধরনের অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করে তৌহিদী জনতা। এ সময় তারা প্রেমিকের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে, ভালোবাসা দিবস চলবে না চলবে নাসহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রেমিক যুগলদের সাবধান করেন। সেইসঙ্গে ফাস্টফুডের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে প্রেমিক যুগলের সন্ধানে টহল দেয়পরে তারা ভূঞাপুর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মার্কেটের মামা গিফট কর্ণার ও ফুল বিতান নামের একটি দোকানে হামলা করে ফুল ছিড়তে শুরু করে এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঐ দোকানের মালিক আলম হোসেন বলেন, প্রতিবছরই বসন্তবরণ উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দোকানের বাহিরেও আলাদাভাবে ফুল রাখি। সেদিন দোকানও একটু সাজাই। কিন্তু গতকাল বিকালে কিছু মাদরাসা পড়ুয়াছাত্র এবং টুপি, জুব্বা, পরিহিত লোক দোকানে এসে ফুল বিক্রি করতে নিষেধ করে। আমরা তাই আর সেরকম কিছু করিনি। আজ তারা আবার আসছে ফুল নিয়ে নাকি অলিগলিতে যুবক যুবতীরা ঘোরাঘুরি করে। সেই কারণে আমার দোকানে ফুল বিক্রি করা অপরাধ।
পরে তারা আমার দোকানের সমস্ত গোলাপ এবং অন্যান্য ফুলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। আমার দোকান ১৭ বছরের পুরনো। আমরা ফুলের ব্যবসা করি, তবে আমরাতো বিয়ের কাজ করি, গাড়ি সাজাই, বাড়ি সাজাই, জাতীয় দিবসে প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ফুলের সরবরাহ করি। একটা ফুল একজন ব্যক্তি বিভিন্ন কাজেই লাগাতে পারে। তাহলে কি ফুল বিক্রি করা অপরাধ? তিনি আরো জানান, অনেকদিন যাবৎ ব্যবসা করি কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। আমার দুটো দোকানে তারা ফুল পিষে ফেলেছে। বাজার সমিতির সভাপতি মহোদয়কে জানানো হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ওসি সাহেব এখানে এসেছিলেন, তিনি দেখেছেন।
এ ঘটনায় বাজার সমিতি কোন পদক্ষেপ নেবে কিনা, তা জানতে চাইলে বাজার সমিতির সভাপতি শাহজাহান কবীর লিটন মুঠোফোনে বলেন, জানতে পেরেছি কিছু হুজুর মামা গিফট কর্ণারের সামনে রাখা ফুলগুলো ভাঙচুর করে ফেলে দেয়। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এসে কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি। তারা শহরের নিরিবিলি ফুডকর্ণারেও গিয়েছিল কাপল ধরার জন্য। সেখানে তারা একটি গ্রুপ প্রোগ্রাম করে। সেখানে হুজুররা বক্তব্য দিচ্ছে। সেখানকার ছবি দেখে আমরা কিছু চিহ্নিত করেছি। যদিও তাদের নাম শনাক্ত করা যায়নি। সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাজার সমিতির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিরিবিলি ফুড কর্ণারের ম্যানেজার আসাদুল খান বলেন, গতকাল হুজুররা আমাদের ফুড কর্ণারে এসে শুক্রবার ফুড কর্ণার বন্ধ রাখতে বলে। পরে আমরা সবে বরাত উপলক্ষে বন্ধ রাখছি। এদিকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ভূঞাপুর শাখা সংসদ বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাদের বসন্তবরণ অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে উদীচী ভূঞাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, এখন পরিস্থিতি খারাপ, তাই বসন্তবরণ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সময় সুযোগ বুঝে পরে করা হবে। এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম রেজাউল করিম সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হুজুররা ভাঙচুর করেনি, ফুল বিক্রি করতে নিষেধ করছে। পরে ফুলগুলো ফেলে দেয়। এ ঘটনায় কোন অভিযোগ আসেনি।
সূত্র সময়ের কণ্ঠস্বর
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।