উজ্জ্বল অধিকারী: সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোল চত্বর ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম খবরের শিরোনামে উঠে আসলেও সস্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের সামনেই রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট (বিশেষ পোশাক) পড়ে সোর্স দিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার অভিযোগ উঠেছে। সরজমিনে বুধবার ১১টার দিকে দেখা যায়, চলতি দুটি বাসকে থামিয়ে বিশেষ পোশাক পড়ে গাড়ির বাইরের দিকে থাকা বক্স খুলে ও যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে আসছিল।
পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তারা নিজেদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মী দাবি করেন। পরে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। বাস দুটি থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে ছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি জিপ। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সংস্থাটির সিরাজগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক এমদাদুল হক। ক্যামেরা দেখে আপনার টিমের লোকজন কেন পালিয়ে গেলেন জানতে চাইলে তিনি ভিডিও করতে বারণ করেন।
এমনকি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো নিউজ না করতেও অনুরোধ করেন। মূলত রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরে যারা তল্লাশি করছিলেন তারা কেউই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মী ছিলেন না! তারা সংস্থাটির ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সংস্থাটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদেরকে দিয়েই মহাসড়কে তল্লাশির কাজ করাচ্ছেন। কাজটি বেআইনি হলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে নিয়মিত এমন অভিযান চালানো হয়।
এমন ঘটনায় বাসের মালিক-শ্রমিকরা অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষ পোশাক পরে প্রায় প্রতিদিন সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রাজশাহী ও বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস থামিয়ে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে আলামত সরিয়ে ফেলার গুরুতর অভিযোগ আছে।
গত বছর জেলার সিরাজগঞ্জ রোড এলাকায় তারা একটি অভিযানে গিয়ে দুটি স্বর্ণের বারের সন্ধান পান। কিন্তু লোভ সামলাতে না পেরে কর্মচারীরা জোর করে বার দুটি নিয়ে যান। পরে কাস্টমসকে সেগুলো না দিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা গোপনে স্বর্ণগুলো ফেরত দেন। এ ঘটনায় সংস্থাটির চার কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরিবহন স্টাফ জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বহিরাগতদের দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক তল্লাশি করান। তারা যাত্রী ও গাড়ির স্টাফদের ব্যাগের পাশাপাশি শরীর তল্লাশি করেন। এতে তাদের ভোগান্তি হলেও হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেন না। মূলত সংস্থাটির সদস্যরা কাউকে পরোয়া করেন না।
সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিক সরকার বলেন, ‘কোনো সংস্থার সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ কারও শরীর বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি তল্লাশি করতে পারেন না। যদি কেউ করে থাকেন তাহলে অন্যায় করেছেন। এটা অবৈধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আরও সচেতন হওয়ার দরকার ছিল। আইন অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বাইরে কেউ কাজটি করলে তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘কোনো সোর্স দপ্তরের পোশাক পরে কারও ব্যাগ, সম্পত্তি বা শরীর তল্লাশি করতে পারবেন না। এটা আইন পরিপন্থি। পুরোপুরি অবৈধ। এমন ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিদর্শক এমদাদুল হকের সামনে বহিরাগতরা বাস থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাঁকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।
এদিকে সড়কের ওপর সোর্স দিয়ে তল্লাশি চালানোর বিষয়টি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলামের নজরে আনা হলে তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2025 সংবাদের আলো. All rights reserved.