শেরপুরের প্রতাবিয়ায় জনবহুল এলাকায় ইটভাটা, বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর


শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের প্রতাবিয়া গ্রামে ‘এএমবি’ নামে একটি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাটাটির অবস্থান একেবারে জনবহুল এলাকায়। ফলে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এছাড়া ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত পিক-আপ ভ্যান, ট্রলির চাপায় বিনষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ধুলার কারণে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে ইটভাটার মালিক মানিক মিয়া ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়দের প্রবল বাধার মুখেও ইটভাটাটি স্থাপন করেন। স্থানীয়দের আবেদনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশগত অবস্থান বিবেচনা করে তৎকালীন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল নোমান পত্রের মাধ্যমে অবৈধ বাটা নির্মাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। সে সময় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়েও লিখিত এলাকাবাসী। স্থানীয়দের বাধার মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগের জেলা এবং স্থানীয় নেতাদের মোটা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ভাটা তৈরি করেন। এখন আবার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভাটা পরিচালনা করতে আওয়ামী লীগের খোলস পাল্টে বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন। এই বিষয়ে এলাকাবাসীরা ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। এছাড়াও ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে অভিযোগ দিয়েছে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে। ইটভাটা তৈরির পূর্বে মানা হয়নি কোন আইন। এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রতাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজাম উদ্দিন আহমেদ মডেল কলেজ, চৈতনখিলা জাব্বারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, প্রতাবিয়া পূর্বপাড়া নূরানী কওমি মাদ্রাসা, আদিবা জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা সহ পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রতাবিয়া জামে মসজিদ, প্রতাবিয়া পূর্ব পাড়া জামে মসজিদ, প্রতাবিয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ গুলোতে পরিচালিত হয় এবতেদায়ী মাদ্রাসা। এতে হুমকিতে রয়েছে শিশুস্বাস্থ্যের। স্থানীয় শাকিল আহমেদ শিমুল বলেন, এই ইটভাটার ধুয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আশেপাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও বসতঘরের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও কালো ধোঁয়ায় মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাটার ট্রলির কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে গাছপালা বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। গাছে ফলমূল ধরা কমে গেছে। স্থানীয় লোকজন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে দৌড়ালেও প্রশাসন দেখে না দেখার অভিনয় করছে।
ফলে এই পরিবেশ বিদধ্বংসকারী ব্যক্তিরা আমাদের বুকের উপর আমাদেরকে মৃত্যুর মুখে ফেলে ভাটা পরিচালনা করছে। জামান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক সহ অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী জানান, ভাটার মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রভাব দেখিয়েছে। এখন ত্যাগী বিএনপি হয়েছে। এ ব্যাপারে বাজিতখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররুম বলেন, আমার জানামতে এবার ভাটা চালু হলেও এখনো ইট পুড়ানো শুরু হয়নি। এলাকাবাসী ও মালিক পক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে এমন ভাটা বন্ধ হোক এটা আমিও চাই। এ বিষয়ে ভাটার মালিক মানিক মিয়া জানান, সবার যেভাবে ভাটা পরিচালনা করে আমিও সেভাবেই পরিচালনা করতেছি। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুইজন বিএনপি নেতাকে ৫০ শতাংশ মালিকানা দিয়ে নতুন করে অংশী মালিকানার মাধ্যমে ইটভাটা পরিচালনার কথা ভাবতেছি। জানতে চাইলে শেরপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নূর কুতুবে আলম সিদ্দিক জানান, এএমবি ইটভাটাটি সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদের আলো বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।